সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের পথে হেঁটেছে বাংলাদেশও। ফলে দোকানপাট এখন বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ত্রাণের কথা শুনলেই সংগ্রহকারীদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কে আগে সংগ্রহ করবেন, তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। এই ত্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে বহুবার হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছেন। বাংলাদেশের বন্দরনগর চট্টগ্রামে বছরখানেক আগে একটি অনুষ্ঠানে খাবার খেতে গিয়ে অত্যধিক ভীড়ের চাপে পদদলিত হয়ে প্রায় দু’ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ত্রাণ নিতে নিয়ে শৃঙ্খলতার অনন্য নজির গড়লেন বৃহন্নলারা। তা দেখে অভিভূত প্রশাসন।
লকডাউনের জেরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আয় এখন বন্ধ। এই সম্প্রদায়ের ১৮৮ জন সদস্যের হাতে বৃহস্পতিবার ত্রাণসামগ্রী তুলে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নগরের পাহাড়তলির একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রথম থেকেই ত্রাণ বিলিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর দিয়েছিলেন তাঁরা। বৃহন্নলাদের নেত্রী ফাল্গুনীকে শৃঙ্খলা মেনে ত্রাণ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তখন ফাল্গুনী তাঁদের আশ্বস্ত করেন, তাঁরা শৃঙ্খলা মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ নেবেন। কমিউনিটি সেন্টারের মাঠে প্রত্যেক বৃহন্নলা নির্ধারিত দূরত্ব মেনে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যান।
ত্রাণ বিতরণের নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টায়। কিন্তু বিতরণ করতে আধঘণ্টা দেরি হলেও তাঁদের শৃঙ্খলায় কোনও চ্যুতি ঘটেনি। ত্রাণের প্রতিটি ব্যাগে ছিল ১০ কেজি চাল ও ২ কেজি ডাল। দেখা গিয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা ত্রাণের ব্যাগগুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে সারিবদ্ধভাবে রাখেন। এরপর একে একে ১৮৮ জন সদস্য ত্রাণ নিয়ে যান। ত্রাণ বিতরণে সহযোগিতা করেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বৃহন্নলাদের শৃঙ্খলাবোধ দেখে অভিভূত প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ প্রতিদিনই হচ্ছে। ত্রাণ দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ নানা বিষয়ে। কিন্তু আজ বৃহন্নলারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন শৃঙ্খলা কাকে বলে। এ কৃতিত্ব প্রশাসনের নয়, এটা ওঁদেরই কৃতিত্ব। শৃঙ্খলার নতুন নজির স্থাপন করেছেন তাঁরা।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.