সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মূলে রয়েছে ভাইরাসের তিনটি ধরন। করোনার জিনের কাঠামো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানতে পেরেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঘটাচ্ছে মূলত জি ধরনের করোনা ভাইরাস। এছাড়া অন্য আরও দু’টি ধরন হচ্ছে জিএইচ ও জিআর। এগুলোর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি কি না, তার কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হবে, এমন কোনও প্রমাণও পাননি বিজ্ঞানীরা। এদিকে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩৯৯ জন মানুষের।
অন্যদিকে, করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকা ব্রিটেনের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনকা বা আমেরিকার নোভাভ্যাক্স, এই দু’টির কোনও একটি সফল হলেই টিকার ডোজ পাবে বাংলাদেশও। বিশ্বের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে টিকার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) বাংলাদেশ-সহ ৯২টি দেশের জন্য সুখবর দিয়েছে। গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ সেথ বার্কেল বলেন, “অনেকবার আমরা দেখেছি, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নতুন চিকিৎসা, রোগ পরীক্ষা ও নতুন টিকা পাওয়ার দৌড়ে পেছনে পড়ে থাকে। করোনার টিকার ক্ষেত্রে আমরা এমনটি চাই না।”
করোনা ভাইরাসের পরিবর্তনের ধরনকে চিহ্নিত করার জন্য এল, এস, ডি, ভি, জি–এ রকম নানা ভাগে ভাগ করেছেন অণুজীববিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে এ পর্যন্ত পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণ হয়েছে ২৮৮টি। বাংলাদেশে করোনার প্রথম পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণ হয়েছিল বেসরকারি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ল্যাবরেটরিতে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধ্যাপক সমীর সাহা। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশে জি ধরনের বা জি ক্লেডের ভাইরাসের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। মাত্র সাতটি ক্ষেত্রে ডি ধরন পাওয়া গেছে। এই সাতটি পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম এলাকার ল্যাবরেটরিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার জিনকাঠামো বিশ্লেষণের তথ্য নিয়মিতভাবে জমা দিচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেমে (জিআইএসআরএস)। ৪ আগস্ট পর্যন্ত এই দপ্তরে ৬৯,৬৫৫টি পূর্ণ জিনকাঠামো বিশ্লেষণের তথ্য জমা পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন দেশে করোনার কোন ধরনটি বেশি সক্রিয়, তারও তালিকা প্রকাশ করছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে জি, জিএইচ ও জিআর ধরনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কোন ধরনের করোনার সংক্রমণ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ইতালির বলগোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষক। তঁারা বলছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের আদি ভাইরাসটি ছিল এল ধরনের। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে জি ধরনের করোনা ভাইরাস। এরপর এই ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর নানা ধরন বা ক্লেড বা স্ট্রেইন দেখা গেছে। জি, জিএইচ ও জিআর ছড়িয়ে পড়ে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়াতে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, জি ধরনের ভাইরাসটি সম্ভবত ইউরোপ থেকেই এসেছিল। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডি ধরনের ভাইরাসের উৎস ছিল সম্ভবত চিন। ৪৮,৬৩৫টি জিনকাঠামোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তঁারা বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত, কঙ্গো ও কাজাখস্তানে ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। সারা বিশ্বে প্রতিটি নমুনায় গড়ে সাতটি মিউটেশন দেখা গেছে। বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে মিউটেশন হয়েছে ৯.৮৩।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.