সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রতি বছরই দেশজুড়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের চোখ থাকত বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ জেলার শিকদার বাড়ির দুর্গাপুজোর দিকে। মণ্ডপে ভিড় জমাতেন বহু মানুষ। গত বছরও পুজো হয়েছিল ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে। কিন্তু এবছর সেই জৌলুসে ভাটা পড়েছে। বাড়ির সামনের গেট তালাবদ্ধ। আশপাশের সবকিছুই যেন স্তব্ধ। শিকদার বাড়ির এই নীরবতাই এখন গ্রামের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
দুর্গোৎসবের আগেই বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে বাংলাদেশে। জুলাই মাসে হিংসাত্মক আকার নেয় ছাত্র আন্দোলন। ঝরেছে বহু রক্ত। এই গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে শিকদার বাড়ির দুর্গাপুজোতেও। যা নিয়ে এই পুজোর আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার জানান, “ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে আর অন্যদিকে আনন্দ হবে! আমি এটা মেনে নিতে পারিনি। এজন্যই এবার বড় করে পুজোর আয়োজন করা হয়নি।”
পুজো নিয়ে আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদার বলেন, “দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা হয় শিকদার বাড়ির সব থেকে বড় পুজোমণ্ডপ নিয়ে। প্রতি বছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর মিলে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। এবারের পুজোর জন্যও বেশ কয়েকজন কারিগর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তৈরিও করা হয়েছিল কিছু প্রতিমা। কিন্তু প্রধান ভাস্কর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কাজ স্থগিত করা হয়। এর পর তাঁকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ভারতে। তাই এবার আর ধুমধাম করে কিছু হচ্ছে না। পারিবারিকভাবে ছোট করে পুজো হচ্ছে।” হাকিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহার কথায়, “কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এবছর তেমন সাড়া নেই।”
শিকদার বাড়ির এই দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করতে ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার বৃহত্তর পরিসরে প্রথম এই পুজোর শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকে প্রত্যেক বছর। ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপুজোর জমকালো আয়োজন শুরু হয়। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পুজো উদযাপিত হয়েছে।
কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পুজো হয়। করোনা মহামারীর কারণে শিকদার বাড়িতে ৩ বছর উৎসব বন্ধ ছিল। তবে গত বছর ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে পুজো আয়োজিত হয়। বিশাল বড় পুজোমণ্ডপে ছিল- ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টির রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, সমুদ্র মন্থন, সীতা হরণ, শ্রীকৃষের অষ্টসখী-সহ ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুম্ভকর্ণের প্রতিমূর্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.