সুকুমার সরকার, ঢাকা: আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। ভোটে বাধা সৃষ্টি করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌলবাদীরা। ছক কষা হচ্ছে বড়সড় নাশকতার। এর আগেও বহুবার হামলা চালানো হয়েছে বাসে ও ট্রেনে। যাতে প্রাণহানিও ঘটেছে। আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে বিএনপি-জামাতের দিকে। এই প্রেক্ষিতে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন কমিশনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কয়েকটি বিশেষ দল নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়েছে। তারা নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এই প্রচারে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বৃস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ঢাকা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট আধিকারীকদের সঙ্গে একটি মত বিনিময় সভা করে নির্বাচন কমিশন। সেখানেই এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার মহম্মদ সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভা আয়োজিত হয়। প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজি হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ( ইসি) মহম্মদ আলমগির এবং কমিশনের সচিব মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম। এছাড়াও ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার-সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য আধিকারীকরাও।
বৈঠকে ১০ থেকে ১৫ জন ওসি নির্বাচন কমিশনকে জানান, “নির্বাচনী পরিবেশ ভালো আছে। কোনও ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।” এর পরই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে নাশকতার আশঙ্কার কথা জানানো হয়। তাঁরা বলেন, বিশেষ কয়েকটি দল প্রচারের মধ্যে নাশকতা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোরাল করে তোলা হতে পারে। ভোটের দিন পর্যন্ত এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বক্তব্য শোনার পর এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, “কি হল, না হল তা দেখার সুযোগ বর্তমানে নেই। যে কোনও মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতেই হবে। দেশের এবং আন্তর্জাতিক মহল যেন দেখতে পায় এই নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরে যে গণতন্ত্রের সূচনা হল তা অব্যাহত রাখতে হবে।” ইসির সূত্র বলছে, অতীতের মতো এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার ভোটের আগের রাতে কেন্দ্রে পৌঁছানোর দাবি জানানো হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ভোটের জন্য অতিরিক্ত সমস্যা বলে মনে করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে নাশকতা, সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত সমস্যা হল বিএনপির এই অসহযোগ আন্দোলন। একটি বা দুটি দলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। সেইগুলো মোকাবিলা করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হবে। ভোট প্রতিহত-রেলে নাশকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাশকতার একটি নয় একাধিক ঘটনা হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে নাশকতার আশঙ্কায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলের দুটি ট্রেন আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ট্রেনগুলো হল- রাজশাহী থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত উত্তরা এক্সপ্রেস এবং ঈশ্বরদী থেকে রহনপুর পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.