ফাইল ফটো
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে। এবার আপনারা ওদের আশ্রয় দিন। আমাদের ঘাড়ে আর চাপাবেন না।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিকে কটাক্ষ করে এই মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশকে চাপ না দিতে পশ্চিমের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দিতে পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক থেকে পাঠানো একটি ভিডিও বার্তায় এই আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘সেদিন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। তাঁকে বললাম, দেখেন, আমাদের দেশে মাথাপিছু বার্ষিক আয় হল দু’হাজার ডলার। আর আপনাদের হল ৫৬ হাজার ডলার। আমার এখানে এক হাজার ২০০ লোক প্রতি বর্গমাইলে থাকে। সেখানে আপনার দেশে ১৫ জন লোক প্রতি বর্গমাইলে থাকে। আপনি নিয়ে যান না কেন রোহিঙ্গাদের? আপনার যদি অত দরদ থাকে, আরও ভাল জীবন দেবেন, নিয়ে যান আপনারা। অসুবিধা কী? আমরা কাউকে আটকাব না। অন্যত্র স্থানান্তর করুন। যেকোনও দেশে নিয়ে যান।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাঁদের দেশে নিয়ে যান না কেন? ক্যালিফোর্নিয়া অভিবাসীদের ভূমি। সেখানে নিয়ে যান আপনারা। কাউকে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।’ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপের সমালোচনা করে মোমেন বলেন, ‘আন্দামান সাগর ও ভারত মহাসাগরে যখনই ঝামেলা হয় তখন সবাই খালি বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আপনারা ওদের আশ্রয় দেন। ভাবখানা এমন, যেহেতু আমরা আগে ১১ লক্ষকে দিয়েছি, বাকিগুলোরও দেব। কিন্তু, আমরা বলেছি যে আমরা পারব না। আমাদের আর কোনও জায়গা নেই। আর অন্যদেরও একটা দায়িত্ব আছে। কারণ রোহিঙ্গা আমাদের একার সমস্যা না। এটা বিশ্বের সমস্যা। বড় বড় যাঁরা মাতব্বর, যাঁরা সারাক্ষণ আমাদের উপদেশ দেন, আদেশ করেন, তাঁরাও নিতে পারেন। তাঁদের জায়গার কোনও অভাব নেই।’
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিয়ে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর বিরোধিতার সমালোচনা করে মোমেন বলেন, ‘তাঁদের উদ্বেগ হল, ভাসানচর একটু দূরে। তাঁরা সহজে যেতে পারবেন না। কক্সবাজারে তাঁরা কুতুপালংয়ে থাকলে ১৫ মিনিটের ড্রাইভ (গাড়ি চালানোর পথ) হচ্ছে কক্সবাজার। সেটি একটি রিসর্ট সিটি। সেখানে চার-পাঁচতারা হোটেল আছে। কিন্তু, ভাসানচরে এই ধরনের হোটেল-টোটেলের ব্যবস্থা নেই। লোক গেলে হোটেল হবে। তবে এখনও হয়নি। আর ওখানে সমুদ্রপথে যেতে হবে। তাতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। ভাসানচরে জাহাজে করে খাবার পৌঁছে দিতে খরচ হবে বলে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলি অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) প্রধান কর্মকর্তা নিজেই আমাকে ফোনে বলেছেন, খুব বেশি খরচ হবে না।”
[আরও পড়ুন:এখনও অমিল বিদ্যুৎ-জল পরিষেবা, বাংলাদেশে আমফানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.