Advertisement
Advertisement

ছাড়ছে না কোনও বাস, ভারত ভ্রমণ শেষে বেনাপোলে আটকে কয়েক হাজার যাত্রী

শুক্রবার ছুটির দিনও রাজধানী ঢাকার পথে নেই গণপরিবহন।

Student movement stir, tourists stuck in Benapole Check post
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:August 3, 2018 2:29 pm
  • Updated:August 3, 2018 2:29 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: শুক্রবার ছুটির দিনও রাজধানী ঢাকার পথে নেই গণপরিবহন। অথচ সড়কে আজ শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। রিকশ-অটোরিকশয় দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনেই যাত্রীদের পৌঁছাতে হচ্ছে গন্তব্যে। মালিক ও শ্রমিকদের বক্তব্য, সড়কে ভাঙচুরের কারণে তারা যানবাহন বের করছেন না। ঢাকায় ২ ছাত্র-ছাত্রী বাস চাপা পড়ে নিহতের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে চাইছে বিএনপি। এমন অভিযোগ এনে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন করার মতো শক্তি, সাহস ও সক্ষমতা না থাকার জন্যই তারা কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করছে। তিনি বলেন, বিএনপির এখন আর কোনও উপায় নেই। তাই তারা এখন কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করবে, ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। নিজেদের কিছু করার মতো শক্তি, সাহস ও সক্ষমতা তাদের নেই। শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের সব দাবি প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহণ আইনে রয়েছে। এ আইন হলে সড়ক দুর্ঘটনা যানজটের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এ আইনে পথচারীদের জন্যও বিধান থাকবে।

[ঢাকায় বৃষ্টি মাথায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পড়ুয়ারা]

এদিকে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও জামাতে ইসলামির ছাত্রশিবির সচেষ্ট বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আমাদের কাছে ছাত্রদল ও শিবিরের কথোপকথনের অডিও রয়েছে। সেখানে ছাত্রদলকে স্কুল ও কলেজের ড্রেস পরে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দিতে শোনা গিয়েছে। গত পাঁচদিনের আন্দোলনে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই কয়দিনে ৩১৭টা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আটটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। তাই আমরা এই আন্দোলন রদ করার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভুয়ো খবর প্রচার হচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রধানমন্ত্রী যা বলেননি, সেগুলোই তার বরাত দিয়ে প্রচার হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব ভুয়ো খবরে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়। অপরদিকে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে রাজধানী ঢাকা-সহ সারাদেশে এবার গাড়ি চালানো বন্ধ রেখে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। দেশের অধিকাংশ জেলা ও থানায় অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিক-শ্রমিকরা। এমন অবস্থায় কলকাতা সফর শেষে পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল পৌঁছে চরম বিপাকে পড়ছেন কয়েক হাজার সাধারণ যাত্রী। কেননা বেনাপোল থেকে কোনও বাস ছাড়ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বেনাপোলে অবস্থান নিতে হয়েছে সদ্য ভারত ফেরত যাত্রীদের। এ দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ভারতে যাওয়া আত্মীয়জনকে এ মূহূর্তে দেশে ফিরতে বারণ করে দিয়েছেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলি জানান, পরিবহণ শ্রমিকরা গাড়ি চালাবেন না। তাই সকাল থেকে তারা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাস্তায় অবস্থান করছেন। গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপা পড়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে তুমুল আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার থেকে চলমান আন্দোলন টানা বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল। শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে চালকের লাইসেন্স আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করছে। আর লাইসেন্স না থাকলে মামলা করাচ্ছে পুলিশকে দিয়ে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার ছাত্রদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে তাদেরকে সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এই আন্দোলন সহিংসতার দিকে টার্ন করতে পারে। কারণ, দেখা গিয়েছে কাফরুল থানায় আক্রমণ করা হয়েছে। রাজারবাগ ও মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে ঢিল ছোঁড়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সব দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তাদের এখন ঘরে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তাও তিনি চেয়েছেন।

Advertisement

[বাস দুর্ঘটনায় ২ পড়ুয়ার মৃত্যুতে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ঢাকা]

শিক্ষার্থীরা যে নয়টি দাবি তুলেছে, তার সবগুলো যৌক্তিক বলে স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখেছি, এই আন্দোলনের মধ্যে শিবির ও ছাত্রদল সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু ছাত্ররা তাতেও সড়ক থেকে উঠেনি। এরই মধ্যে কিছু পুরনো ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন আইডি থেকে যাতে ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়। ২০১২ সালে একটি শিশুর গলা চেপে ধরা এক পুলিশ কর্মকর্তার ছবি যেমন প্রচার হচ্ছে, তেমনি ২০১৩ সালে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কর্মসূচিতে সংঘটিত সংঘর্ষের ছবিও প্রচার করা হচ্ছে। এসব ছবি যে মানুষকে উত্তেজিত করছে, সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। আবার বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী যা বলেননি সেটা নিয়ে ভুয়ো সংবাদ প্রচার করছে। এমনকি সংসদ অধিবেশন না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য রাখছেন, সেই ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতপন্থি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এসব সংবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কোমল শিক্ষার্থী-সহ দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু কুচক্রী মহল বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন বিকৃত, মিথ্যা ও ভুয়ো সংবাদ প্রকাশ করছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব ভুয়ো সংবাদ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার করা হচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement