সুকুমার সরকার, ঢাকা: চমকে ভরা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা। টানা দুই দফা সফলতার সঙ্গে দেশ শাসন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তেমনই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁর শত্রুরাও তাঁকে ক্যারিসমাটিক দেশনেতা হিসেবে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন। এবার শুধু নিজের দল আওয়ামি লিগের নেতাদেরকেই সরকার পরিচালনায় রাখছেন শেখ হাসিনা। বিগত সরকারগুলোতে প্রতিবারই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করছে আওয়ামি লিগ আর শেখ হাসিনা হচ্ছেন চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে আওয়ামি লিগ। সে সময় জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদের আ স ম আবদুর রবকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে সরকার গঠন করে তাকে ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের’ সরকার বলেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে এই পর্বে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভায়ও জিএম কাদের-সহ জাতীয় পার্টির নেতাদের পাশাপাশি সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। ওই সরকারের শেষ দিকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে ইনুর সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল, পাশাপাশি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতারাও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু এই প্রথম জোট শরিক দলগুলোর নেতাদের বাইরে রেখে কেবল আওয়ামি লিগ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন শেখ হাসিনা।
সোমবার নতুন মন্ত্রীদের শপথ সামনে রেখে রবিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেন। ২৫ মন্ত্রণালয়ের ১৮টিতেই পরিবর্তন এসেছে। বিদায়ী সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জলসম্পদ মন্ত্রী জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। বিদায়ী সরকারে জাতীয় পার্টি থেকেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও বাদ পড়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের পরদিনই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছিলেন, তাদের দলের কোনও সদস্য এবার আর মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে জাতীয় পার্টি। সে কারণে নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির নেতাদের বাদ পড়াটা অনেকটা অনুমিতই ছিল। তবে ইনু, মেনন ও মঞ্জুর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়াটা চমক হিসেবেই এসেছে, যেমনটি ঘটেছে মন্ত্রিসভায় পুরনোদের অধিকাংশের বদলে নতুন মুখ আসায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.