সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভাষা দিবসের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Dhaka University) টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য। আর সেই ভাস্কর্য (Sculpture) নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ভাস্কর্যটি দেখা গিয়েছে, বিশ্বকবির মুখটি স্কচ টেপ দিয়ে আটকানো, হাতে ধরে থাকা ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থটি রক্তাক্ত পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেন কবিকে কথা বলা এবং তাঁর চিন্তার প্রকাশকে জোর করে আটকে রাখার অপচেষ্টা। গত মঙ্গলবার বিকেলে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বিশ্বকবির এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে মানুষকে তাঁদের বাক ও মতপ্রকাশে স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে প্রদর্শন করা হবে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই সচেতনতার জন্য কেন বিশ্বকবিকে বেছে নেওয়া হয়েছে? বিদগ্ধজনের প্রশ্ন, আরও তো অনেক কিছু ছিল। বারবার তাঁকে নিয়ে কেন এত টানাহ্যাঁচড়া? বিশ্বকবিকে নিয়ে এই বাংলায় অনেক জল ঘোলা হয়েছে। পাকিস্তানের (Pakistan) শাসনকালে বিশ্বকবিকে প্রায় নিষিদ্ধই রাখা হয়েছিল। যার রাহুমুক্তি ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হস্তক্ষেপে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) রচিত সংগীতই ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত শিমুল কুম্ভকারের যুক্তি, ‘‘আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছি, যা মানুষকে কথা বলতে এবং আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে। বাংলা অ্যাকাডেমি আদর্শ প্রকাশনীর স্টল বইমেলায় নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া অনেক বইও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর প্রতিবাদ জানাতেই এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছি।’’ আরেক শিক্ষার্থী নজির আমিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলা অ্যাকাডেমির আদর্শ প্রকাশনীর ঘটনাটি এর সঙ্গে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। এর সঙ্গে সরকারি, ধর্মীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সেন্সরশিপও জড়িত। সম্প্রতি মানুষের মত ও বাকস্বাধীনতায় বাধার মতো যত ঘটনা ঘটেছে সবক’টির প্রাসঙ্গিকতা এই ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে।’’
যদিও এ নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই বৃহস্পতিবার দুপুরের পর দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে উধাও কবিগুরুর ভাস্কর্যটি। কেউ বা কারা তা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তার বদলে সেখানে ব্যানার টাঙানো, তাতে লেখা – ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.