সুকুমার সরকার, ঢাকা: বলা হয়, মা-বাবার শ্রেষ্ঠ সম্পদ সন্তান। আর সন্তানের অবহেলাই সবচেয়ে বড় আঘাত। এবার ছেলের হাতে এমন আঘাতই পেয়েছেন শাকিলা বেগম। ওই বৃদ্ধার কথায়, তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে। বাসে তুলে দিয়ে বলেছে, তিনি যেন কখনও ফিরে আসার চেষ্টা না করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) উত্তরের জনপদ জেলা দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। ওই অঞ্চলের সিপি সড়ক এলাকার একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন শাকিলা বেগম। বাড়ির ঠিকানাও বলতে পারছেন না তিনি। শুধু বলছেন, “আমি ঢাকায় ছেলের বাড়িতে থাকতেন। কয়েক দিন আগে আমাকে বাসে তুলে দিয়ে ছেলে বলেছে, আমি যেন আর ফিরে না আসি।” শাকিলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “বাসে তুলে দেওয়ার পর আমি ও বাসের হেল্পার ছেলের কাছে মোবাইল নম্বর চাইছিলাম। সে তাঁর মোবাইল নম্বর দেয়নি। বাসের ড্রাইভার আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়েছে।”
এই খবর জানাজানি হতেই শনিবার শাকিলা বেগমকে উদ্ধার করে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভরতি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তাঁর পরিবারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। হিলি সিপি সড়ক এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, গত ১৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ওই বৃদ্ধা তাঁর বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে বৃদ্ধা জানান, তিনি ঢাকা শহরে থাকতেন। নিজের ও ছেলের নাম ছাড়া আর কিছু বলতে পারেননি। তাঁর কথার মধ্যে অনেকটা উর্দুভাষী টান রয়েছে। তিনি মাঝেমধ্যে পাশের দোকান থেকে খাবার খাচ্ছেন। তবে কেউ টাকা বা খাবার দিতে চাইলে নিচ্ছেন না। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বললে তিনি বলছেন, বাড়িতে গেলে ছেলে ও ছেলের বউ আবারও মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
অবশেষে শাকিলা বেগমকে গতকাল শনিবার রাতে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভরতি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, ওই বৃদ্ধা গত কয়েকদিন ধরে খোলা জায়গায় থেকে ও পরিবারকে হারিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন তিনি। হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা আধিকারীক শ্যামল কুমার দাশ বলেন, শাকিলা বেগমের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভরতি করানো হয়েছে।
ওই বৃদ্ধা জানান, কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী প্রয়াত হয়েছেন। ছেলের বাড়ি ঢাকা শহরে। সেখানেই থাকতেন। তবে ছেলের বাড়ি শহরের কোথায় তা তিনি বলতে পারছেন না। স্বামীর নামও বলতে পারছেন না। তাঁর একমাত্র ছেলে জামিল হোসেন। ছেলের চার মেয়ে। তাদের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে ও ছেলের বউ বাড়িতে প্রায়ই মানসিক নির্যাতন করতেন। কয়েক দিন আগে ছেলে ও ছেলের বউ একটি ব্যাগের মধ্যে পরনের কিছু কাপড়চোপড় ভরে তাঁর হাতে দিয়ে শহর থেকে একটি বাসে তুলে দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.