সুকুমার সরকার, ঢাকা: ছাত্র আন্দোলন সামলাতে ভুল হয়েছে বলে মানলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। জয় বলেন, “প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের কোটা নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। এমনকি এটি আদালতের উপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।”
হাসিনা-পুত্র জয় বলেন, “কোটা কমানোর জন্য আমাদের সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। তবে আদালত ভুল করেছে। আমরা সবাইকে কোটা চাই না বলে আশ্বস্ত করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সেটা শোনেনি এবং বিচার ব্যবস্থার ওপরই বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে।” জয় দাবি করেন, ছাত্রদের আন্দোলন সহিংস হওয়ার পিছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল। বলেন, “একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এই আন্দোলনের পিছনে ছিল বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কারণ অনেক আন্দোলনকারীর কাছে ১৫ জুলাই থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। গত ১৫ বছর ধরে আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। ফলে বাংলাদেশে এখন আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন। বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও আন্দোলনকারীদের কাছে সরবরাহ একমাত্র কোনও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাই করতে পারে।”
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের বিষয়ে জয় বলেন, একদিন আগেও তিনি বা তার মা কেউ ভাবেননি- পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর মায়ের দেশ ছাড়ার কোনও ইচ্ছাই ছিল না। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া জনগণের উদ্দেশে তিনি একটি ভিডিওবার্তায় বিষয়টি নিয়ে ঘোষণার কথা ভেবেছিলেন। এজন্য তিনি বিবৃতির খসড়া তৈরি করেছিলেন এবং সেটি রেকর্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সবকিছু পরিকল্পিত ছিল। তবে তিনি যখন রেকর্ডিং শুরু করতে গেলেন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ‘সময় নেই’ বলেন জানিয়ে দেন। তাঁরা বলেন, ‘ম্যাম, সময় নেই। আমাদের এখন যেতে হবে।’
জয় আরও জানান, শেখ হাসিনা দেশ না ছাড়ার জন্য অনড় ছিলেন। তিনি মাকে রাজি করিয়েছেন। এর পর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে সামরিক বিমানঘাঁটির মধ্যে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল। বলেন, “আমার খালা (শেখ রেহানা) আমাকে ডাকলেন। আমি মাকে বোঝালাম, তোমার নিরাপত্তার জন্য তোমাকে চলে যেতে হবে। যদি এই জনতা তোমাকে খুঁজে পায়, কোথাও ধরে ফেলে এবং সেখানে গুলি চলে, তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে। হয় তোমাকে এ হত্যার জন্য দায়ী করবে কিংবা যদি তোমাকে ধরে ফেলে তাহলে মেরে ফেলবে। তাই সবচেয়ে ভালো হবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং আমিই তাকে চলে যেতে রাজি করিয়েছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.