সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিদেশে পোশাক রপ্তানির বড় চাকরি, ভাল বেতন, সুনিশ্চিত নিরাপত্তা। এসবের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের বায়িং হাউজের চাকরিতে নিয়োগ করা হত অনেক সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েকে। পরবর্তী সময়ে তাঁরাই হয়ে উঠেছেন কুখ্যাত মাদক পাচারকারী।মঙ্গলবার এলিট ফোর্স র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মাদক পাচারের কাজে লাগানো হত এসব সুন্দরী মহিলাদের। সোমবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদেরই ৩ জন।
র্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খানের কথায়, ‘‘২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় বিশেষ অভিযানে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন-সহ দুই বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়। তার কয়েকদিন পর ৩২ কেজি হেরোইন-সহ বাংলাদেশি নাগরিক সূর্যমণিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধারাবাহিকভাবে মাদক-সহ বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের তদন্তে বাংলাদেশে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। টাস্ক ফোর্সের অভিযানে গত ১২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চয়েজ রহমান নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধারাবাহিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে কাউলা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে মায়ানমারের মাদক ১৯৭০ টি ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রা ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।’’ ধৃতরা হল ফতেমা ইমাম তানিয়া, আফসানা মিমি, সালমা সুলতানা, শেখ মোহাম্মদ বাধন, রুহুল আমিন। সকলেরই বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
এবার জলপথে যাওয়া যাবে বাংলাদেশ, মার্চেই শুরু ইন্দো-বাংলা নৌ পরিষেবা
গোয়েন্দাদের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে তাদের নিয়ন্ত্রক মহম্মদ আরিফ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। আরিফ উদ্দিনের আল-আমিন ফ্যাশন বায়িং হাউস নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সে জড়িত। আরিফ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে মাদক সিন্ডিকেটে বাংলাদেশি ১৫-২০ জন যুক্ত। এই সিন্ডিকেট দেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। নিজের বায়িং হাউজে আরিফ নিজে কর্মী নিয়োগ করতেন। এছাড়া রেহানা এবং রুহুল আমিন তাঁকে একাজে সাহায্য করত। মূলত স্বল্প শিক্ষিত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্মার্ট মেয়েদের কাজে নিয়োগ করা হত। দেশের অভ্যন্তরে তাদের মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হত। পারদর্শী হয়ে উঠলে তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে সেই সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত এবং পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা হত। তারপর বিদেশে মাদক সরবরাহ ও বিতরণের কাজে ব্যবহার করত। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চিন, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। মাদক পরিবহণে তারা বিভিন্ন পথ ব্যবহার করত।
এবার জিআই তকমা পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খিরসাপাত আম
এই মাদক চোরাচালানের তদন্তে এক সময় শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সেইমতো এবার র্যাবের অভিযানে মাদক পাচারচক্র ধরা পড়ল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.