সুকুমার সরকার, ঢাকা: সম্প্রতি লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সেখানেই এক সাহিত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। “আমি যখনই বাংলাদেশে আসি, তখনই নিজের বাড়িতে এসেছি বলে মনে হয়”, এমন মন্তব্যই করেন তিনি।
সোমবার রাজধানী ঢাকার বাংলামোটরে বাতিঘর সাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত ‘আমার জীবন, আমার রচনা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে লেখক বলেন, বহুবার বাংলাদেশে এসেছি, কখনো বাংলাদেশ এলে আরেক দেশে এসেছি বলে মনে হয়নি। ময়মনসিংহের আদিনিবাস নিয়ে বলতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ”ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম, আগের মতো আর নেই। সেখানে আমাদের কাঁচামাটির বাড়ি ছিল। সেইগুলো এখন ইটের বাড়ি হয়ে গিয়েছে। বাড়ির সামনের বড় মাঠটাও নেই। জমিদার বাড়ি ছিল, সেটাও ঠিক নেই। একটি স্কুল ছিল সেটি খুঁজে পেয়েছিলাম। ছোটবেলায় আমরা যে ব্রহ্মপুত্রে স্নান করতাম, সাঁতরে বেড়াতাম ওটা এখন চর হয়ে গিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র এখন একটি অসুস্থ নদ। দূরে আমাদের একটি পাকা বাড়ি আজ হসপিটাল।” শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে শীর্ষেন্দু বলেন, “আমি ছেলেবেলা থেকেই দুরন্ত ছিলাম। মা আমাকে সামলাতে পারতেন না। সারাদিন খালি ছোটাছুটি করে বেড়াতাম। ছোটবেলায় আমাকে নুনো বলে ডাকতো সবাই।”
সেই অনুষ্ঠানে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় তার পোর্ট্রেট। শীর্ষেন্দু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশে পাঠকের সংখ্যা প্রায় ৫-৭ গুণ বেশি। পাশাপাশি বাংলাদেশে বইয়ের কালোবাজারি প্রসঙ্গে নিজের অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন তিনি। লেখক হয়ে ওঠার নেপথ্যকাহিনি জানতে চাইলে ঔপন্যাসিক বলেন, ছেলেবেলা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই বেশি পড়তাম। সেখান থেকেই আমার ভাষার দখল আসতে শুরু করে। এরপর থেকে লেখালেখিও শুরু করলাম। তবে ১৬-১৭ বছর বয়সে কোচবিহারের বোর্ডিংয়ে আমাকে পাঠানো হলো। তখন থেকেই ভালোভাবে লেখালেখি শুরু করি। ১৭ থেকে ১৮ বছর আমার বোর্ডিংয়ে কেটেছে, সেই সময় আমার মাথায় লেখার ভাবনা আসা শুরু করল। চেষ্টা করে একটি গল্পও ছাপা হল। এরপর থেকে নিয়মিত হয়ে গেলাম। এটা আমার কল্পনারও অতীত ছিল।
“আমাদের দেশে লেখকদের বাজার সেরকম নেই। তবে সমরেশ সমরেশ মজুমদার এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। অর্থ উপার্জন করার জন্য আমি কখনও লিখব, এটা চিন্তাই করিনি। এক্ষেত্রে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অনেক রয়্যালটি পেয়েছেন”, ‘আমার জীবন, আমার রচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন কথাই বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সাহিত্য থেকে সিনেমা তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সাহিত্যকে সিনেমায় আনা কঠিন। আমার উপন্যাস থেকে ৩০-৩৫টি সিনেমা হয়েছে। অনেককিছুই বাদ চলে যায় সিনেমায়।” তিনি জানান, বাংলাদেশে অনেক লেখকের লেখাই ভাল লাগে তাঁর। এর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, আল মাহমুদ আছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.