সুকুমার সরকার, ঢাকা: বৃহস্পতিবার কোটাবিরোধী আন্দোলনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্টেশনের বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি দেখে আবেগঘন হয়ে পড়েন তিনি। জানান, এখানকার সমস্ত কিছু স্বাভাবিক করতে ১ বছর সময় লাগবে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ছাত্র আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে দেশের নানা প্রান্ত। শাসকদল আওয়ামি লিগের অভিযোগ, এই আন্দোলনে মুখোশের আড়ালে উসকানি দিয়েছে ও সশস্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেছে জামাত ও বিএনপি। যার ফলে এখনও পর্যন্ত ঝরেছে ১৯৭টি প্রাণ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বহু মানুষের।
এদিন সরকারের উন্নয়ন যারা ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তিনি বলেন, “দেশবাসীর কষ্ট লাঘবে সরকার যে উন্নয়ন করছে, সেগুলো ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এ তাণ্ডব যারা করেছে, তাদের বিচার দেশবাসীকে করতে হবে। কোটা আন্দোলনকারীদের যেমন দাবি ছিল, তার থেকে বেশি পূরণ করা হয়েছে।” ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ স্টেশন দেখে হাসিনা বলেন, “সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে পারে, সেটা সুনিশ্চিত করা হবে। দেশটা যাতে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে সেই চেষ্টাই করব। এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে দেশ, সেটা ব্যর্থ হতে পারে না। যে স্থাপনাগুলো মানুষের জীবনকে সহজ করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোন ধরনের মানসিকতা! ঢাকা শহর যানজটে নাকাল। মেট্রো সেখানে স্বস্তি দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই পরিবহণ এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না।” হামলায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে ডিএমটিসিএল আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জানা গিয়েছে, এই ছাত্র আন্দোলনে হিংসার জেরে গত শুক্রবার ঢাকার বনানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয় ও মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। মিরপুর কার্যালয়ের ডাটা সেন্টার সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছেএবং অটোমেটিক ড্রাইভিং মেশিনও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম কুমার পাল জানান, ৪ ধরনের পরিষেবা- ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট, ফিটনেস সনদ ও গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে যে প্রকল্প চলছে ১৫০ কোটি টাকার সে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও ই-সিস্টেমের ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, বনানীর বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন কেন্দ্র করে জঙ্গি-জামাত ও বিএনপির নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে না পারাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে মেনে নিয়েছে আওয়ামি লিগ। যুবলিগ, ছাত্রলিগ,আওয়ামি লিগ, স্বেচ্ছাসেবক লিগ, কৃষক লিগ, যুব মহিলা লিগ, মহিলা আওয়ামি লিগ-সহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে ওঠার নির্দেশনা দিয়েছেন হাসিনা। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের সংকট মুহূর্তে গা ঢাকা দেওয়া নেতা এমনকী দলের সাংসদ-সহ প্রভাবশালী যাঁরা বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামি লিগ সভানেত্রী হাসিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.