সুকুমার সরকার, ঢাকা: আর্থিক অনটন দূর করতে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক দম্পতি। সেখানে বাবা,মাকে লুকিয়ে ব্রিটেনের বাড়ি থেকে পালিয়ে তুরস্কের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় ওই দম্পতির সন্তান। নাম শামিমা বেগম। তার সঙ্গী ছিলেন দুই বান্ধবী আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানা। সেখানে এক ডাচকে বিয়ে করেন শামিমা। এরপর দুই সন্তানের মৃত্যু ও বিভিন্ন চড়াই উতরাই পেরিয়ে ফের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন শামিমা। তবে সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন শামিমা ও তার পরিবার। ফের ব্রিটেনে ফিরতে চান ঘর ছেড়ে আইএসে যোগ দেওয়া তরুণী। তবে সেই আবেদন নাকচ করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
সম্প্রতি ব্রিটেনের দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সম্প্রতি সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এক শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সাক্ষাৎ পান শামিমার।মেয়েটি তাঁকে জানায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ওই ছাত্রী। এরপর লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা । সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়া পৌঁছে যান। সেসময় সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছে আইএস। ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত ‘খিলাফত’ রাজধানী রাক্কায় গিয়ে তাঁরা প্রথম একটি বাড়িতে ওঠেন। যোগ দেন আইএস-এ। তারপর সেখানেই এক ডাচ ব্যক্তিকে বিয়ে করেন শামিমা।
দীর্ঘদিন স্বাভাবিক কাটলেও বর্তমানে বেশ সমস্যায় শামিমা। তিনি জানিয়েছেন, আগে দু’বার সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। তবে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয় তাদের। সম্প্রতি ফের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন শামিমা। এবার সন্তানের স্বার্থে ব্রিটেনে ফিরতে চান।আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো ব্রিটিশ নাগরিক যদি অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব দাবি না করেন, তবে তাঁকে দেশে ফিরে আসতে দিতে তারা বাধ্য। তবে শামিমার আইএস যোগের কারণে, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তাঁকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে সন্তানের সুস্থ জীবনের কামনায় সব প্রতিবন্ধকতা মেনে নিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শামিমা ।
[বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বাংলাদেশের সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা]
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিরিয়ার জীবন নিয়ে সম্পর্কে নানা কথা প্রকাশ করেছেন শামিমা। নিজের সিদ্ধান্তের জন্য একেবারেই অনুতপ্ত নন তিনি। সিরিয়ায় থাকাকালীন বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর সিরিয়া যাত্রার ২ সঙ্গীর । জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন তিনি। তবে শামিমার স্বামী সিরিয়ার যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমপর্ণ করার পর, তাঁরা শরণার্থী শিবিরে থাকতে শুরু করেন। এবার কার্যত নিরুপায় হয়ে সন্তানের স্বার্থে দেশের ফেরার অনুমতির অপেক্ষায় শামিমা। তবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেন ওয়ালেস জানিয়েছেন, যে নাগরিকরা সন্ত্রাসাদী কার্যকলাপে জন্য সিরিয়া গিয়েছিলেন, দেশে ফিরলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবেই। প্রয়োজনে বিচারও হবে। ফলে, শামিমার দেশে ফেরা একপ্রকার অনিশ্চিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.