ফাইল ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা: ইসকন নিয়ে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে বাংলাদেশের বন্দরনগর চট্টগ্রাম। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন সেখানকার হিন্দু ধর্মালম্বীরা। আর এই বিক্ষোভ কড়া হাতে দমন করছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন। অভিযোগ, চট্টগ্রামের হাজারি গলি এলাকায় বাড়িতে ধুকে হিন্দুদের মারধরের করেছে পুলিশ ও সেনার যৌথ বাহিনী। এই ঘটনায় আতঙ্কিত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর পদ্মাপারে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত, আমেরিকার মতো।
ঘটনার সূত্রপাত ৫ নভেম্বর থেকে। ওইদিন ওসমান মোল্লা নামে এক মুসলিম ব্যবসায়ী ইসকনের পুরোহিত ও হিন্দুদের নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এমনকি ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। এই পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ছড়াতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হিন্দুরা। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান তারা। গতকাল তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশ ও সেনার যৌথবাহিনীর। তাদেরকে দেখে ইটপাথর ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর পরই হাজারি গলির বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে হিন্দুদের মারধর করে যৌথবাহিনী। কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়।
জানা গিয়েছে, মারধরের জেরে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। ৫ জনের চিকিৎসা চলছে চিটাগং মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এখনও পর্যন্ত অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’। কয়েকদিন আগে এই সংগঠনের ২ সন্ন্যাসী-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়ের হয়। সেনিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। এর মাঝেই ফের একবার নিপীড়নের শিকার হলেন তারা। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে যাঁরা অস্বীকার করছেন এটাই কী তাঁদের ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশ? যেখানে এভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা!
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। দেশে ছেড়ে তিনি আপাতত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার পর থেকে বাংলাদেশে হামলার শিকার হন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। বিশেষ করে হিন্দুদের উপর আক্রমণের খাঁড়া নেমে আসে। বহু হিন্দুমন্দির ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। সেই থেকেই জারি রয়েছে হিন্দুদের প্রতিবাদ। গত অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় সনাতন জাগরণ মঞ্চ। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবিও রাখে তারা। নানা দেশেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বাংলাদেশে যখন নির্বাচন চলছিল তখনই হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছে তিনি। ভোটের কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমবার মুখ খোলেন ট্রাম্প। এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চলছে বাংলাদেশে। লাগাতার আক্রমণ করে লুটপাট চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সবমিলিয়ে চূড়ান্ত অশান্তি। আমার নজরে থাকলে এমনটা কখনই হতে পারত না।’ আমেরিকার হিন্দুদের সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন ট্রাম্প। ফলে এবার ইউনুস সরকারের জন্য কোন নীতি তিনি প্রনয়ণ করেন বা বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেন কিনা তার উত্তর রয়েছে সময়ের গর্ভে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.