Advertisement
Advertisement

Breaking News

আরপি সাহার খুনিদের লক্ষ্য ছিল মির্জাপুরের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা: ট্রাইব্যুনাল

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের উসকানিতেই হিন্দু নিধন করেছিল রাজাকাররা।

RP Saha killer wanted Hindus in Mirzapur annihilated: War crimes tribunal

মাহবুব রহমান

Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:June 28, 2019 4:15 pm
  • Updated:June 28, 2019 4:15 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামি লিগ। তাদের ধারণা ছিল, আওয়ামি লিগকে স্বাধীনতার জন্য উসকে দিচ্ছে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তারা বেছে বেছে হিন্দু ও আওয়ামি লিগ সমর্থকদের হত্যা করত। গত বৃহস্পতিবার দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা-সহ ৬০ জনকে খুনের মামলার রায় দিতে গিয়ে সেই কথাই ফের মনে করিয়ে দিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা বলেছে, কেবল ব্যক্তি বা পরিবার নয়, পাকিস্তান ও রাজাকারদের উদ্দেশ্য ছিল পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার অন্যতম মাথা টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। ৭০ বছর বয়সী মাহবুবের ভাই আবদুল মান্নানও গণহত্যায় অংশ নেয় বলে উঠে এসেছে তদন্তে।

[আরও পড়ুন- দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত বাংলাদেশের ‘গান্ধীবাদী’ সমাজকর্মী ঝর্ণাধারা]

রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নেমে সেখানেই থাকতে শুরু করেন তিনি। ১৯৩৮ সালে মায়ের নামে মির্জাপুরে প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী হাসপাতাল। দিদিমার নামে গড়ে তোলেন মেয়েদের আবাসিক স্কুল ভারতেশ্বরী হোমস। ১৮৪০ সালে মাগুরা জেলায় বন্ধু সুরাবর্দ্দির নামে কলেজ, ১৯৪৩ সালে টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ এবং ১৯৪৬ সালে মানিকগঞ্জে বাবার নামে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় দুর্ভিক্ষের মধ্যে কলকাতা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানাও খুলে দেন রণদা প্রসাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রেডক্রসের তহবিলে বড় অংকের অর্থ সহায়তা দেন। এরপর ১৯৪৭ সালে সব ব্যবসা, কারখানা, সম্পত্তি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নারায়ণগঞ্জে গঠন করেন ‘কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’।

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৭ মে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে রণদা প্রসাদ সাহা-সহ সাতজনকে ধরে নিয়ে যায়। ওই রাজাকার দলের নেতা ছিল মির্জাপুরের মাহবুর রহমান। তারপর তাদের খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। প্রায় পাঁচ দশক পর সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য মাহবুবকে দেষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল। এই সংক্রান্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “আরপি সাহা এবং তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যা করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল না। আরপি সাহার জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, তাঁর নেতৃত্ব, প্রভাব, গ্রহযোগ্যতা এবং মানবহিতৈষীমূলক কাজকে সমূলে ধ্বংস এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করাই ছিল উদ্দেশ্য। সুতরাং এটি মানবতার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অপরাধ। আদালত আরও বলেছে, “মানবহিতৈষী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া। তাঁদের পাশাপাশি এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে উদ্দেশ্যমূলক এবং পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা সংগঠিত করা হয়েছে। আসামির এই অপরাধকে সহজভাবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মাহবুরের এই কাজে সাহায্য করেছে তার বড় ভাই মান্নান ও বাবা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মৌলানা ওয়াদুদ।”

[আরও পড়ুন- ৪৮ বছর পর মিলল বিচার! দানবীর রণদা প্রসাদ খুনে ফাঁসির সাজা রাজাকার মাহবুবের]

বৃহস্পতিবার এই রায়দানের সময় আদালতে হাজির ছিলেন সময় রণদা প্রসাদ সাহার পুত্রবধূ শ্রীমতি সাহা, তাঁর ছেলে রাজীব সাহা এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ভবানী প্রসাদের স্ত্রী ও ছেলে। চোখের জল মুছতে মুছতে শ্রীমতি সাহা বলেন, “৪৮ বছর পর হলেও বিচার হয়েছে। এই বিচারের কথা শুনে সবাই যেন মনে রাখে যে অপরাধের একদিন বিচার হয়। এই ভয়টা যেন তাদের (অপরাধীদের) থাকে। ন্যায় ও অন্যায়ের ফলাফল কী হয় তা যেন সবার মনে থাকে। আমরা সবসময় ত্যাগের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছি। এই রায় আমরা মাথা পেতে নিলাম। আমরা শান্তি পেয়েছি। তাঁদের আত্মার শান্তি হোক।”

রণদা প্রসাদ সাহার নাতি রাজীব সাহা বলেন, “এটা শুধু আমাদের পরিবারের না, পুরো দেশের মাথার ওপর থেকে একটা বোঝা নেমে গেছে। এতদিন নিঃস্ব অবস্থায় ছিলাম। জানতে পারছিলাম না, বুঝতে পারছিলাম যে কী হবে, কোথায় যাব। আজকে বিশাল একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। আরপি সাহা আর ভবানী প্রসাদ সাহার ত্যাগ বুকে ধরে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে আসছিলাম। সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করলেও বুকের ভিতরে ছিল গভীর বেদনা।”

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা উচিত। বিভিন্ন রায়ে ট্রাইব্যুনাল বরাবরই বলে আসছে যে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, সেগুলো ছিল সংঘবদ্ধ অপরাধ। এর পিছনে পাকিস্তানের বিরাট ভূমিকা ছিল। তাদের অপরাধেরও বিচার করা উচিত।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement