সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের (Bangladesh) বিষফোঁড়া। তারা যে কোনও প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে যে কোনও অঘটন করতে পিছপা হয় না। এভাবেই রোহিঙ্গাদের (Rohingya) নিয়ে বিপদের কথা উল্লেখ করলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি অভিযোগের সুরে জানান, রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তারা ক্যাম্পে ইয়াবার ব্যবসা করে। নিজেদের মধ্যে প্রতিদিন মারামারি, গুলিযুদ্ধ করছে। শুধু তাই নয় – DGFI’এর এক আধিকারিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বুধবারও সেখানে গুলিযুদ্ধ হয়েছে।
কামাল আরও বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে অপরাধ সংঘটিত করছে। তারা কাঁটাতারের বেষ্টনী কেটে মায়ানমারে (Myanmar) গিয়ে নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ইয়াবা নিয়ে আসছে। সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে এপিবিএন’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, এপিবিএন সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের (Human Rights Watch) পর্যবেক্ষণ যা বলছে, তা তথ্যভিত্তিক নয়। তাদের আরও বেশি দেখেশুনে রিপোর্ট করা উচিত।
মায়ানমার সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে পাঁচ বছর আগে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তারও আগে এসেছিল চার লক্ষ। এদের ভিড়ে চলে আসে তস্কর রোহিঙ্গারাও। এর মধ্যে দু’লক্ষ শিশু জন্মগ্রহণ করায় এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লক্ষ। দিনেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ১১৫ টি হত্যাকাণ্ড (Killing) ঘটেছে। ধর্ষণ মামলা হয়েছে শতাধিক। উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পেই একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুনোখুনি, অপহরণ, লুটপাট স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে রূপ নিয়েছে।
এমনকি ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রামে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয়রা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত পাঁচ বছরে ২ হাজার ৪ শতাধিক মামলায় আসামির সংখ্যা ৫,২২৬ জন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারীদের নাম স্থান পেয়েছে। টেকনাফ-উখিয়ায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় আট গ্রুপের মধ্যে ১৯২ জনের হাতে রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে মোহাম্মদ নবি হোসেন গ্রুপ অন্যতম। এই গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ, খুন ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছে। এদের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে প্রশাসনের হাতে। সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বিপদ কাটছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.