সুকুমার সরকার, ঢাকা: যথাযথ মর্যাদা, সম্মান নিয়ে কবে স্বদেশে ফিরতে পারবেন? বিশ্ব শরণার্থী দিবসে এই প্রশ্নই সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আজ, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে এনিয়ে সচেতনতামূলক পদযাত্রা থেকে এই উত্তরের খোঁজ চলল৷
তবে যাঁদের জন্য দিনটি পালিত হল বিশ্বজুড়ে, সেই শরণার্থীদের কিন্তু এই দিনটা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই৷ তারা এই দিবসে প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷ তাঁদের শুধু একটাই দাবি, নাগরিক হিসেবে সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করতে চায়৷ সন্ত্রাসদমনের নামে মায়ানমার সেনার নিপীড়নে বাপ-ঠাকুরদার ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল তাঁদের৷ বাংলাদেশে ঢুকে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফের শিবিরে সবরকম সুযোগসুবিধা-সহ দিন কাটালেও,তাঁদের মন পড়ে রয়েছে রাখাইনে৷ মাথা উঁচু করে তাঁরা ফিরতে চান৷
বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাঁদের দেশে ফেরানোর জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেছেন রোহিঙ্গারা। বলছেন, এদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে জীবনধারণের উপকরণ-সহ সমস্ত সুবিধা থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনেই। মাথা উঁচু করে থাকার সুযোগ নিয়ে ফিরে যেতে চাই। আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা সহযোগিতা করে মায়ানমারকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে ফেরত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে৷
১৯৭৮ সালে শুরু। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে প্রায় বিস্ফোরণের মতো। রাখাইনের হিংসায় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায় সাড়ে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা। ১১ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরনের সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন। রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হচ্ছে৷
বর্তমানে বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি, যা রেকর্ড৷ মূলত গৃহযুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। রোহিঙ্গাদের দাবি, শুধু প্রতি বছর শরণার্থী দিবস পালনে তাঁরা অংশীদার হতে চান না। নিজ দেশে ফিরে বাংলাদেশের বোঝা হালকা করতে চান তাঁরা। উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, ‘প্রাণরক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাই না কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার।’ নয়াপাড়া ক্যাম্পের শফিউল্লা, উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল হাকিম, সেগুপা বেগম, লালু ও ফয়েজ উল্লাহ-সহ অন্যরা সমস্যাটা বুঝছেন৷ তাঁরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মায়ানমারকে স্বদেশের নাগরিকদের নিরাপদে ফেরানোয় রাজি হতে হবে৷’
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত আছে। বাংলাদেশ-মায়ানমারের যৌথ কার্যকরী কমিটি বিভিন্ন সময়ে একাধিক বৈঠক করার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মায়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের কথায়, ‘বাংলাদেশে ১১ লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। তাই বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের জন্য গুরুত্ব বহন করে। শরণার্থীরা দেশের জন্য বিশাল বোঝা। আমরা বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না। আমরা চাই বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যার সমাধান হোক দ্রুত৷’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.