সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গা দুষ্কৃতী তুচ্ছ কারণে শুধু খুনোখুনি করেছে। এদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার খুবই বিব্রত। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দারাও। প্রশাসন সূত্রে, এমন অনেক ঘটনার উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে যেখানে তুচ্ছ কারণে গন্ডগোল করছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ই ব্লকের রোজিনা আক্তারের সঙ্গে সি ব্লকের হাফেজ মহম্মদ ইউনুসের বিয়ে ঠিক হয়। মোহরানা হিসেবে মেয়ে পক্ষের দাবি ছিল দুই টিকল সোনা। কিন্তু, এক টিকলের বেশি দিতে রাজি হয়নি ছেলের বাবা। এর জেরে আটকে যায় বিয়ে। বিবাদে জড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারের উখিয়া লম্বাশিয়ার ক্যাম্প ১-এ আশ্রয় নেওয়া মায়ানমার আকিয়াবের দুই রোহিঙ্গা পরিবার। তবে বয়োজ্যেষ্ঠদের বাগযুদ্ধের মধ্যেও কনেতে মুগ্ধ হাফেজ ইউনুস গোপনে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাত্রীপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যায় ই ব্লকে। কিন্তু, কনের সঙ্গে দেখা করিয়ে নামে ইউনুসকে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে মেয়ে পক্ষের বিরুদ্ধে। নিহতের দাদা মহম্মদ ইউসুফ বাদী হয়ে পরদিন উখিয়া থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেন কনের দুই ভাই ও বাবা-সহ ৫ জনেক নামে। পুলিশ মেয়ের ভাই ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। তবে অন্যরা ওই ক্যাম্প থেকে পালিয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে মহম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী সোনা দিয়ে বিয়েতে রাজি ছিলাম, যৌতুকও চাইনি। কিন্তু, সামান্য মতভেদের জেরে আমার ভাইকে খুন করা হল।’ এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক মধুরছড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মেহবুব আলম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে যা গন্ডগোল হচ্ছে তার বেশিরভাগই এমন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। প্রতিটি ঘটনার পর অপরাধীরা দ্রুত পালিয়ে ক্যাম্প বদল করায় তাদের গ্রেপ্তার করা সহজ হচ্ছে না।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে ৫০৯টি মামলা করেছে। অভিযুক্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৯ জনকে। এর মধ্যে অস্ত্র আইনে মামলার সংখ্যা ৩৮, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ৩৩, ফরেনার্স অ্যাক্টে ৩৭, অপহরণ ১৫, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৩, পুলিশকে মারধরের ১, ডাকাতি ৯, খুন ৪৪ ও ২৪টি মানবপাচারের মামলা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত সাতজন খুন হয়েছে। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে মারা গিয়েছে ৪৯ জন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.