সুকুমার সরকার, ঢাকা: লাখো লাখো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জেরে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যায় জেরবার বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকা৷ ওই এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৫০শতাংশ৷ অন্যদিকে, দৈনিক মজুরির অঙ্ক কমেছে৷ ফলে নিত্যদিনের জীবনযাত্রা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে কক্সবাজারবাসীর৷
ইউএনডিপি ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণা বলছে, রোহিঙ্গাদের বড় সংখ্যায় উপস্থিতি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তৈরি করেছে। বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘খুব দ্রুতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। এর আগে মায়ানমারের ভূমিকার কারণেই রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি বিলম্বিত হয়েছে।’ গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা একসঙ্গে কক্সবাজারের এসে আশ্রয় নেওয়ার পর খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বিপুল হারে বেড়েছে। এর ফলে কক্সবাজার এলাকায় প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৭ সালের আগস্টের আগে চাল প্রতি কেজির দাম ছিল ৩২ টাকা, এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা। আটার দাম আগে ছিল ২৮ টাকা, পরে হয়েছে ৩৫ টাকা। আলুর দাম ছিল ২২ টাকা, পরে হয়েছে ৩০ টাকা। লবণের দাম ছিল ২২ টাকা, পরে হয়েছে ২৫ টাকা। বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির দাম গড়ে প্রতি কেজি ছিল ২৫ টাকা, পরে হয়েছে ৩০ টাকা৷
তবে উলটোদিকেই খেটে খাওয়ার মানুষের দৈনন্দিন মজুরিও কমে গেছে৷ তা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্টের আগে একজন কৃষি,মজুর-সহ অন্যান্য দিনমজুরের গড়ে প্রতিদিন আয় ছিল ৪১৭ টাকা। সেই আয় কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ টাকা। সার্বিকভাবে টেকনাফ উপজেলায় দিনমজুরের আয় কমেছে ১১.২৭ শতাংশ, উখিয়া উপজেলায় আয় কমেছে ১৭.৪১ শতাংশ এবং কক্সবাজার জেলার অন্য অংশে আয় কমেছে ৬.৬৭ অংশ। এই এলাকায় ২৫০০ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ১৩০০’র বেশি পরিবার অতি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে প্রায় ৫৫০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং প্রায় ১৫০০ একর বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এর আগে মায়ানমার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা না রাখায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। তবে এখন এই কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে আমি আশাবাদী।’ তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশকে স্বল্প সংখ্যায় হলেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বলা হয়েছিল। কেউই রাজি হয়নি। দীর্ঘদিন এ সংকটের বোঝা একা বাংলাদেশ বহনও করতে পারে না। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই এই সংকটের দ্রুত স্থায়ী সমাধান দরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.