সুকুমার সরকার, ঢাকা: তহবিল সংকটের কারণে বাংলাদেশে (Bangladesh) আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WBUFP)। রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় শরণার্থী শিবিরে দিনদিন বাড়ছে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা। যথাযথ অর্থের জোগান না থাকায় আগের তুলনায় অপরাধে জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং এ তারাও উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্টরা রোহিঙ্গাদের(Rohingya) দ্রুত মায়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি বলে মনে করলেও মায়ানমার জুনটা সরকারের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে তাও হচ্ছে না।
২০১৭ সালে মায়ানমারে (Myanmar) সেনা অভিযানের মুখে পর্যায়ক্রমে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেন। এরও আগে এসেছিলেন চার লক্ষ রোহিঙ্গা। এই ৬ বছরে আরও দুই লক্ষ রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছেন। এই ১২/১৩ লক্ষ রোহিঙ্গার আশ্রয়, ভরণ, পোষণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। তার পরও দেশের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) মানবিক কারণে রোহিঙ্গা বোঝা টেনে চলছেন।
২০১৮ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে দাতা সংস্থাগুলো। কিন্তু এখন দাতা সংস্থা থেকে চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা মিলছে না, যার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও নানা সংকটে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসংঘের (UN) বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় আরও জমাট বাঁধছে রোহিঙ্গা সংকট। আর এ সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা। তারা অর্থের লোভের পাশাপাশি জোর করে শিবিরের তরুণী-যুবতীদের হোটেলে নিয়ে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। প্রতিবাদী নারীদের বিদেশে পাচার করছে। শরণার্থী শিবিরের আধিপত্য নিয়ে খুন-খারাপিতেও জড়াচ্ছে।
চলতি বছর দু দফা কমানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের রেশন (Ration) বরাদ্দ। প্রথম দফায় পয়লা মার্চ রেশন বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে করা হয় ১০ ডলার। দ্বিতীয় দফায় পয়লা জুন থেকে আরও ২ ডলার কমিয়ে এখন ৮ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও হতাশা। এ নিয়ে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, ‘‘৮৪০ টাকার মধ্যে চাল পেয়েছি ১৩ কেজি, তেল পেয়েছি ১টি আর ১টি লবণের প্যাকেট পেয়েছি মাত্র। এখন কী করব, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এই রেশন দিয়ে সংসার চলে না। এতে আমার স্বামী ও ছেলেরা ক্যাম্পের বাইরে কাজ করতে যেতে বাধ্য হয়। ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে মাসে ১০-১৫ দিন মজুরি দেয় তারা। ওই অর্থ দিয়ে সংসার চলে। যারা ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারে না, তাদের সংসার চলছে কষ্টে।’’
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, ‘‘নানা জটিলতায় ছয় বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এরই মধ্যে দাতা সংস্থাগুলো অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়েছিল। জুন মাসে আরও কমিয়ে জনপ্রতি মাসে ৮ ডলার অর্থাৎ ৮৪০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। হিসাবে দৈনিক রেশন কমেছে ৩৩ শতাংশ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.