সুকুমার সরকার, ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে পড়ুয়াদের টানা ৯ দিনের আন্দোলনের পর ঢাকা-সহ বড় শহরগুলোর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পড়ুয়াদের আন্দোলন ও সংঘাত এবং তার পালটায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের অবসান ঘটার পর জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় আটক বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের বন্ধু ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই। মঙ্গলবার ফেসবুকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমার বিনীত অনুরোধ এবং আর্জি, তারুণ্যের সৎ ও সত্যনিষ্ঠ প্রতিনিধিকে শাস্তি দেবেন না।’ নিরাপদ সড়কের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রবিবার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এরপর রবিবার রাতে শহিদুলকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়। শহিদুলের প্রতিষ্ঠিত পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রঘু রাই একাত্তরে স্টেটসম্যান পত্রিকার আলোকচিত্রী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ভারতমুখী শরণার্থীদের জনস্রোত ক্যামেরাবন্দি করেন। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত প্রখ্যাত এই আলোকচিত্রী একাত্তরের ভূমিকার জন্য ২০১২ সালে শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে পান মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা।
খোলা চিঠির শুরুতে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সে কথাই তিনি মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার নাম রঘু রাই। ২০১২ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে আপনি আমাকে সম্মাননা দিয়েছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রীকে মহান বিপ্লবী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সম্বোধন করে তিনি লিখেছেন- ‘দৃক আর পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম শেখ সাহেবের একজন ভক্ত। গত তিন দশক ধরে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে তাকে জানার সুযোগ আমার হয়েছে। রবিবার আল-জাজিরা (ইংরেজি) চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে শহিদুলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে তা কি শুধু সড়কের নিরাপত্তার দাবিতেই নাকি এর পিছনে আরও বড় কিছু রয়েছে?’ শহিদুল বলেছিলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন করছে। ব্যাংক লুট করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করছে- এ সবই চলছে দেশে। এ সবের বিরুদ্ধেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে। শুধু নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলন নয়।’
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকায় কোনও সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান ছিল না। ট্রাফিক সপ্তাহ চলার মধ্যে গণপরিবহন কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের মৃত্যু হলে তাদের সহপাঠীরা সেদিনই বিক্ষোভে নেমে পড়ে। এই দুর্ঘটনা নিয়ে নৌমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের হাসিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা ঢাকার পড়ুয়ারা। তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আন্দোলনের মধ্যে ওঠে নয় দফা দাবি। সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা অবতীর্ণ হয় পুলিশের ভূমিকায়। শুরু করে চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা। যাতে ধরা পড়ে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও আইন প্রণেতারাও অনেক ক্ষেত্রে আইন মানছেন না। সরকার মনে করছে, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, দাবি মেনে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিগগিরই মাঠে নামছে না। এখন যদি কেউ কিছু করার চেষ্টা করে, তা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। গত ৯ দিনের ঘটনা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সোমবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংস ঘটনায় গ্রেপ্তার করা ২২ জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের আবেদনে পুলিশ মামলার পলাতক আসামিদের ‘জঙ্গি’ বলে উল্লেখ করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.