সুকুমার সরকার, ঢাকা: অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি। পদ্মা বিধৌত মাদারীপুর জেলার (ফরিদপুর জেলার প্রাক্তন মহকুমা) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি। জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নামে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগটির দুই বছরের বিল বকেয়া পড়েছে।
বাড়িটির এহেন অবস্থায় সোচ্চার হয়েছেন সাহিত্যপ্রেমী এলাকাবাসী। তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে কবির বাড়িতে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অবশ্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (Sunil Ganguly) ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাদারীপুর মহকুমার কালকিনি থানার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পাঠশালায় পড়া অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে কবিরা সপরিবারে পাড়ি জমান পশ্চিম বাংলায়। দেশান্তরি হওয়ার অনেক বছর পর ২০০৩ সালে প্রথম মাদারীপুরে এসেছিলেন কবি। তার আগমনের পর থেকে সেই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ-সহ সার্বিক দিক নজরে আসে স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমী ও এলাকাবাসীর। কালকিনির সেই সময়ের ইউএনও শেখ হাফিজুর রহমানের সহযোগিতায় সুনীলের ৭ একর জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালকিনির ইউএনওর নামে মিটার এনে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। দুই বছরের বেশি সময় বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় কবির বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ। কবির বাড়ি আলোহীন দেখে ক্ষুব্ধ সাহিত্যপ্রেমীরা। দ্রুত কবির বাড়িতে আগের মতো আলো জ্বলবে- এমনটাই দাবি তাদের।
এদিকে, দায় এড়াতে ইউএনও দোষ চাপাতে চাইছেন সুনীল সাহিত্য ট্রাস্ট নামে সংগঠনের ওপর। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে। সুনীল সাহিত্য ট্রাস্টের সদস্য বিপ্লব হাওলাদার জানান, কবির বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ ইউএনওর নামে ছিল। বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
কালকিনি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আবদুল মাজেদ বলেন, “আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে ইউএনওকে জানিয়েছিলাম। তিনি বকেয়া বিল পরিশোধ করেননি। পরে বকেয়া বিল পরিশোধ করলে আমরা ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেব।” কালকিনির ইউএনও দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আমি যতটুকু জানি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণ করার জন্য বেসরকারিভাবে একটি কমিটি আছে। এর সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এই কমিটি কতটা সক্রিয় আছে, তা জানা নেই। যখন মেলা হয়েছিল তখন উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখন কী অবস্থায় আছে তা জানি না। তবে কমিটি চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।” মাদারীপুরের জেলা শাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, “বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সময় করে কবির বাড়ি ঘুরে দেখে তার স্মৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.