সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনাতঙ্কের মধ্যেই ঢাকার কাকরাইলে তাবলিঘি জামাতের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৭ জন JMB জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তাবলিঘি জামাত সদস্যের ছদ্মবেশে তারা ভারত হয়ে সৌদি আরব যেতে চেয়েছিল। এর জন্য গত একমাসে মোট তিনবার ভারত সীমান্তে ঘুরে আসে তারা। তবে সেখানে সুবিধা করতে না পেরে ঢাকায় ফিরে আসে। সৌদি আরব গিয়ে ইমাম মাহদীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় ছিল। কিন্তু, তার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) বিভাগের এডিসি তহিদুল ইসলাম। ধৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে তিনি জানান, ৪ মে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার সময় ঢাকার কাকরাইল মসজিদের সামনে থাকা জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ১৯টি মোবাইল, দু’লক্ষ ৩৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও ৯২২ মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ধৃতরা নিজেদের জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান নামে একজন বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ওই ব্যক্তি জেহাদের পক্ষে ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন বক্তব্য এবং গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জেহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও এবং ভিডিও প্রকাশও করেছে। ধৃত ১৭ জন এই বক্তব্যে অনু্প্রাণিত হয়। তারপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসেবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করে। ধৃতরা হল, মহম্মদ হায়দার আলি (৪৪), মহম্মদ মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মহম্মদ জামিরুল ইসলাম (২৪), মহম্মদ বিল্লাল হোসেন (৩৮), মহম্মদ শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মহম্মদ ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২৫), মহম্মদ মোজাম্মেল হক (৩৩), মহম্মদ শাহজালাল (৩৪), মহম্মদ আক্তারুজ্জামান (৩০), মহম্মদ মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), সোহাইল সর্দার (৩৩), ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল (২৮) ও মহম্মদ সোহাগ হাসান (২০)।
ধৃতরা জানিয়েছে, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। গত মার্চের মাঝামাঝি সময় তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিঘি জামাত সদস্য সেজে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত ও কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের বলা হয়েছিল, করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে এক ধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াছন্ন হয়ে যাবে তখন সীমান্তে কোনও পাহারা থাকবে না। এই সময় তারা যেন চলে আসে। এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করে ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদের আরও জানানো হয়েছিল, আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না। আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফেররা সবাই মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাশি হবে। ইমাম মাহদীর আগমন এই রমজানে সমাগত তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবে যেন আসার চেষ্টা করে। এই কথা শুনে তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মোতাবেক তারা ঢাকায় আসে।
এডিসি তোহিদ বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়ে। আর ফিরে আসেননি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সাদ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও ৭ জন ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসেবে সৌদি আরবে হিজরত করেছে বলে ধৃতরা জানায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.