ছবি- সংগৃহীত
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলোর নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। এবার বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল মুজিবের ছবি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ফিল্ম সিটি থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। আগামী বছর থেকে আর পাঠ্যবইয়েও থাকছে না ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুজিবের রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। পাঠ্যক্রমে যুক্ত হবে আরবি ভাষা। আর মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপগুলোয় বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে মুজিব-হাসিনার নাম-স্মৃতি সব কিছু মুছে ফেলতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
সোমবার বঙ্গভবনের দরবার কক্ষ থেকে খুলে নেওয়া হয়ে শেখ মুজিবের ছবি। রবিবার এই কক্ষেই শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন ৩ উপদেষ্টারা। গত অক্টোবর মাসে জানা গিয়েছিল পাঠ্যবইয়ের পিছনের প্রচ্ছদে থাকা শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এবার থেকে বইয়ের পাতায় থাকবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অধ্যায়। সেইসঙ্গে আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে ‘শহিদ’ আবু সাইদের নামে একটি নতুন গল্প যুক্ত করার কথাও ভাবা হয়েছে। এবার বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও পাঠ্যপুস্তকে কিছু পরিবর্তন করছে শিক্ষা দপ্তর। বাংলা পাঠ্যবই থেকে ৪ জন লেখকের লেখা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ আগামী বছর থেকে বইয়ে আর থাকছে না। এর পাশাপাশি স্কুল পাঠ্যক্রমে আরবি ভাষাকেও অন্তর্ভুক্ত করছে ইউনুস সরকার।
এছাড়া গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’র নামও বদলে ফেলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত নতুন নাম ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে ফিল্ম সিটি কর্তৃপক্ষ এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। রবিবার ফিল্ম সিটির ইনচার্জ নাসির উদ্দিন বলেন, “নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাশ হয়নি। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে নতুন নাম হবে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি। তবে লিখিতভাবে এখন আমরা কোথাও আগের নামটি ব্যবহার করছি না। ১৯৮০ সালে যখন ফিল্ম সিটি নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন এই নামটিই ছিল। ২০১৫ সালে থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’ রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে, বাকিটা সবারই জানা আছে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। বাধ্য হন দেশ ছাড়তে। এর পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার কয়েকদিনের মধ্যেই আসে ১৫ আগস্ট। এতদিন এই শোক দিবস পালনের জন্য সরকারি ছুটি থাকত বাংলাদেশে। কিন্তু হাসিনা গদিচ্যুত হতেই এবছর সেই ছুটি বাতিল করে দেয় ইউনুস সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনা-সহ বঙ্গবন্ধু মুজিবের স্মৃতি মুছতে তৎপর বিএনপি, জামাত-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। আর সেই মতোই পদক্ষেপ করছে ইউনুস সরকার। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের নানা প্রান্তে হাসিনা ও মুজিবের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুজিবের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.