সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে আগামী ২ বছরের মধ্যে পাঁচলাখ রোহিঙ্গা ফিরতে পারেন মায়ানমার। প্রকাশ হওয়ার আগেই ফাঁস হওয়া ‘আসিয়ান‘-এর এক প্রতিবেদনে এমনই আভাস মিলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলি নিয়ে তৈরি সংস্থাটির এমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট টিম (আসিয়ান-ইএআরটি)-র প্রতিবেদনটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু, তার আগে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে বলেই মনে করছেন বাংলাদেশের মানুষ।
ফাঁস হওয়া ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মায়ানমারের প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মায়ানমার সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচলাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। তবে এই প্রতিবেদনে রাখাইন প্রদেশের নাগরিকদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে উল্লেখ না করে ‘মুসলিম’ সম্প্রদায় হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে পাঁচলাখ রোহিঙ্গাকে ফেরাতে মায়ানমারের ২ বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
এই খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসেছেন সমালোচকরা। তাঁদের অভিযোগ, মায়ানমারের অনীহার কারণেই বাংলাদেশে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা খুব কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলিও রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়ে মায়ানমারের চেষ্টাকে কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, রোহিঙ্গাদের বসবাসের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেই মায়ানমারে ফেরত পাঠানো দরকার। না হলে তাঁদের আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। সংস্থাটির আরও অভিযোগ, রাখাইনে এখনও যে চারলাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তাঁরা মূলত খোলা কারাগারের মধ্যে রয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলি প্রতিক্রিয়া দিলেও রাষ্ট্রসংঘ প্রতিবেদনের কপি আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর মন্তব্য করবে বলে জানিয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা হওয়ার পরেই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অশান্তি শুরু হয় মায়ানমার সরকারের। এরপরই রাখাইন প্রদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের ঝড়। গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে মায়ানমার সেনার বিরুদ্ধে। নিজেদের বাঁচাতে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে, নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। যদিও, তা আলোর মুখ দেখেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.