সুকুমার সরকার, ঢাকা: নুসরত খুনের ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার-সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করল তদন্ত কমিটি। ৩০ এপ্রিল রাতে কমিটি এই সুপারিশ জমা দেওয়ার পর অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তাঁরা হলেন, পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরি, সোনাগাজী থানার প্রাক্তন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, উপপরিদর্শক মহম্মদ ইকবাল ও মহম্মদ ইউসুফ।
তদন্তে ফেনীর ওই ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চার পুলিশ আধিকারিক ছাড়াও মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সহ-সভাপতির গাফিলতির প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টায় অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) রেজাউল করিমের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান ডিআইজি এস এম রুহুল আমিন। এসময় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খুনের ঘটনার পর পুলিশ-সহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করে করা হয়েছিল। তদন্তের পর প্রশাসনের তরফে যাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে সোনাগাজী থানার প্রাক্তন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে আরও একমাস সময় পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। অন্যদিকে এই মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে ৩ দিনের হেফাজত শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে আরও ৫ দিনের হেফাজত চান পিবিআই-র পরিদর্শক শাহ আলম। যদিও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ জাকির হুসেন তাকে দুদিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে সোমবার ওই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী-সহ অন্তত ৩০ জনের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য নেন তদন্তকারীরা। ওই মাদ্রাসার নাইটগার্ড মোস্তফা সাক্ষী দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, “৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর ১০-১২ মিনিট আগে হবে। আমি তখন গেটে ডিউটি করছি। চিৎকার শুনে মাদ্রাসার শেল্টার সেন্টারের দিকে দৌড়ে যাই। দেখি সিঁড়ি দিয়ে রাফি নেমে আসছে। তার সারা গায়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বিন্দুমাত্র কাপড় নেই শরীরে। মাংসগুলো আগুনে সিদ্ধ হয়ে খসে পড়ছে মাটিতে। তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিজের মেয়ের ছবি। আমি রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়ি। হাতের কাছে যা পেয়েছি, তা দিয়েই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। পেছন থেকে একজন পাপোশ ছুড়ে দেন।সেই পাপোশ দিয়ে আমি রাফির গায়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাই। তিনি বলেন, রাফি বাঁচার আকুতি জানিয়ে চিৎকার করছিল, তার গলা দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ বের হচ্ছিল। সেদিনের ওই দৃশ্য যখন আমার চোখে ভাসে, তখন আমি কান্না থামাতে পারি না। এখনও রাতে ঘুমোতে গিয়ে ভয় পাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.