সুকুমার সরকার, ঢাকা: পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে জামিনে মুক্ত হলেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মহম্মদ ইউনুস। শ্রম আইনের ১০টি নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় রবিবার তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক রহিবুল ইসলাম। এর আগে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন ড. ইউনুস। তার ভিত্তিতেই আজকের নির্দেশ।
ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে এই মামলা চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। গত ১৩ জানুয়ারি তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের আরও তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। শ্রম আইনের ১০টি নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলে নতুন করে ৫ জানুয়ারি ইউনুস ও চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) তরিকুল ইসলাম। মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ছাড়াও গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনিন সুলতানা, পরিচালক আহমেদ হাই খান ও এজিএম গৌরি শংকরকে বিবাদী করা হয়েছে।
অভিযোগকারী তরিকুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর গ্রামীণ কমিউনিকেশনস সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁর নজরে আসে অন্তত ১০টি বিধি লঙ্ঘন করে কাজ চলছে সেখানে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিধি অনুযায়ী শ্রমিক বা কর্মচারীদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বই দেওয়া হয়নি, শ্রমিকের কাজের সময়ের নোটিস পরিদর্শকের কাছ থেকে অনুমোদিত নয়, সংস্থাটি বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি, কর্মীদের বছরশেষে ছুটির অর্ধেকটা দেওয়া হয়নি, নিয়োগবিধি মহাপরিদর্শক অনুমোদিত নয়, ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি ও উৎসব ছুটি সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড বা রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না, সংস্থার মুনাফার অংশ ৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ বণ্টন করা হয় না, সেফটি কমিটি গঠন করা হয়নি। কর্মীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করালেও কোনও ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেননি এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেনি।
এরপর সেখানে এক পরিদর্শক প্রতিষ্ঠানটি দেখে ত্রুটিগুলো সংশোধনের নির্দেশনা দেন। চিঠি লিখে বিবাদী পক্ষ জবাব দেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৮ অক্টোবর বর্তমান পরিদর্শক ফের এনিয়ে জবাব তলব করেন। তবে বিবাদীরা বাড়তি সময়ের আবেদন করেন। তারপরও আবেদনের সময় অনুযায়ী তাঁরা জবাব দাখিল না করায় তাঁরা শ্রম আইনের প্রতি দায়বদ্ধ হচ্ছেন না বলে মনে করা হয়। এই অবস্থায় বিবাদীরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৩ ধারা ৩৩ (ঙ) এবং ৩০৭ অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডনীয় অপরাধের অভিযোগ করেন পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের বিরুদ্ধে যেসব বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কারণে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের চাকরিচ্যুত তিন কর্মীর পৃথক তিনটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে একই আদালত গত ৯ অক্টোবর ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। পর ৩ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকিয়া পারভিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করায় জামিন পান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.