ছবি: প্রতীকী
সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করল নতুন জঙ্গি সংগঠন। দেশটির পাহাড়ি অঞ্চলে হিংসার মেঘ তৈরি করে জন্ম নিয়েছে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া’। এমনটাই খবর গোয়েন্দা সূত্রে। ইতিমধ্যে ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে সংগঠনটি বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে জেহাদের নামে ঘর ছেড়েছে বেশ কয়েকজন তরুণ। তারা দুর্গম পাহাড়ী জনপদ জেলা বান্দরবানের প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে উঠেছে। দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া’। বান্দরবানে ওই শিবিরকে লক্ষ্য করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে। বম জাতিগোষ্ঠীর একটা অংশের উদ্যোগে সংগঠনটি গঠিত হলেও তাদের দাবি, ছ’টি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের ১৯টি জেলা থেকে ‘জেহাদের’ নামে ৫৫ জন তরুণ ঘর ছেড়েছে বলে গত সোমবার দেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাক্শন ব্যাটালিয়নের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ৫৫ জনের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণ নাম-ঠিকানার একটা তালিকাও প্রকাশ করা হয়। জানানো হয়, ‘নিরুদ্দেশ’ বা ‘নিখোঁজ’ থাকা এই তরুণদের অধিকাংশ পাহাড়ী জনপদ বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় কেএনএফের ক্যাম্পে স্থাপন করা প্রশিক্ষণ শিবিরে আছে।
সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে জামাতুল আনসারের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে পাহাড়ের ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, সেখানে এখনও জামাতুল আনসারের ৫০-এর অধিক সদস্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ তিন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের কিছু নেতার উদ্যোগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া (যার বাংলা অর্থ: পূর্ববর্তী হিন্দের সাহায্যকারী দল) গঠন করা হয়। ২০১৭ সালে এরা সংগঠিত হতে শুরু করলেও সংগঠনের নাম ঠিক করে ২০১৯ সালে।অতীতেও দেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন পাহাড়ে আস্তানা বা ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। কেউ জমি কিনে, কেউ ছোটখাটো মাদ্রাসা স্থাপন করে চেষ্টাটি করে। আবার কখনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের (এনজিও) আড়ালে সে চেষ্টা হয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীর আস্তানায় ধর্মভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ নেওয়ার এমন খবর আগে জানা যায়নি। জামাতুল আনসার তাদের বাছাই করা তরুণদের ছোট ছোট গ্রুপে জ্যেষ্ঠ সদস্যের হেফাজতে রাখে। চরাঞ্চলে শারীরিক কসরত-সহ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে কেএনএফের ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে লড়াই করছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ)। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি এই ছয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। কেএনএর দাবি, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মায়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমায় বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল বংলাদেশে ফিরে আসে। রুমা উপজেলার এডেন পাড়ার নাথান বম এই সংগঠনের প্রধান। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের স্নাতক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.