শিরিনা খাতুন
সুকুমার সরকার, ঢাকা: সন্ত্রাসবাদীর জীবন যে অন্ধকারময়, তা বুঝিয়েও ফেরাতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এখন তার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে দু্’বার বিয়ে করা শিরিনা খাতুন ওরফে তাহসিন আবদুল্লাহ(২৩) নামে এক যুবতীকে। শিরিনা যে হিজরতের নামে ভারত হয়ে অন্য দেশে গিয়ে যুদ্ধ করার স্বপ্ন দেখেছে তা কিছুদিন আগেই জানতে পেরেছিল তার পরিবার। এরপর থেকে বারবার চেষ্টা করে কোনওভাবে বোঝানো যায়নি তাকে। নিজের লক্ষ্যপূরণ করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল সে। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়তে হল ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) ইউনিটের হাতে।
নব্য জেএমবি(JMB)’র নারী শাখার সেকেন্ড ইন কমান্ড শিরিনাকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার গাবতলি এলাকায় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শুক্রবার ঢাকার একটি আদালতে তুলে তাকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় CTTC। কিন্তু, আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
তদন্তকারী ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় বিয়ের পর শিরিনা শ্বশুড়বাড়িতেই থাকত। সেসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। এরপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার তিনটি অ্যাকাউন্ট ও পেজ ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শ প্রচার ও সদস্য সংগ্রহের কাজ করত। এছাড়া জেহাদি মতাদর্শ ছড়ানোর কাজে লিপ্ত থাকা প্রায় আড়াইশো পেজের সঙ্গে যুক্ত ছিল শিরিনা। তার মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকেই নব্য জেএমবির নারী শাখায় যোগ দিয়েছে। বর্তমানে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে সিটিটিসি। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, শিরিনা হিজরত করে ভারতে যেতে চেয়েছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য নব্য জেএমবির কয়েকজন শীর্ষনেতার সঙ্গে কথাবার্তাও চূড়ান্ত হয়। কিন্তু, সেই পরিকল্পনা সফল হওয়ার আগেই গ্রেপ্তার হতে হলে তাকে।
শিরিনার গ্রামের বাড়ি হল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশাবেড়িয়ায়। এর উলটো দিকে রয়েছে ভারতের নদিয়া জেলার রানাঘাট থানা এলাকা। এখানে দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ার ছক ছিল তাঁর। নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমানি খাতুনের হাত ধরে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয় শিরিনা। এরপর থেকে অনলাইনে নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা ইসলাম আল হিন্দি, আবু দুজানা ও আবু মহম্মদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। এছাড়া আসমানি খাতুনের মাধ্যমে আইএস নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল।
রবিবার এপ্রসঙ্গে CTTC’র সিনিয়র সহকারী কমিশনার(AC) শেখ ইমরান হোসেন বলেন, ‘শিরিনা খাতুনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাকে জেরা করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থেকে নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমানি খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর মতিঝিল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার ও শিরিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু, শিরিনার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। ধৃতদের জেরা করে নব্য জেএমবির নারী শাখার পুরো নেটওয়ার্ককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.