প্রতীকী ছবি।
সুকুমার সরকার, ঢাকা: গৃহযুদ্ধে পুড়ছে মায়ানমার। সেদেশের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বার্মিজ সেনা তথা ‘টাটমাদাও’ ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। যার আঁচ এসে পড়ছে পড়শি দেশ বাংলাদেশে। শনিবার সীমান্তের ওপার থেকে মর্টার শেল ও বুলেট এসে পড়ছে কক্সবাজার সীমান্তে। যা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশিরা। ঘর ছাড়ার ভাবনায় রয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। লিখিত চিঠিও জমা দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পাশাপাশি মায়ানমারের সংঘর্ষের জেরে কোনওভাবে একজন রোহিঙ্গায়ও দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সমস্ত রকম পদক্ষেপ করছে বিজিবি।
জানা গিয়েছে, শুধু মায়ানমারের রোহিঙ্গারাই নয়, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের বাসিন্দারাও। তাঁরা এখন গোলা ও বুলেট হামলা থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। জুন্টার সঙ্গে আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোতে অনবরত গোলা আছড়ে পড়ছে। এর জেরে জখম হওয়ার খবরও মিলেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি বুলেট ও মর্টার শেল পড়ার স্থানটিও পর্যবেক্ষণ করেন।
অন্যদিকে মায়ানামারের এই সংঘর্ষের জেরে দেশে ফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থী মহম্মদ রিয়াদ বলেন, “রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেকে সেখান থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বলছে, নাফ নদের পাড়ে কয়েকশো মানুষ অপেক্ষা করছে। তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে।”
সূত্রের খবর, রাখাইন-সহ মায়ানমারের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। ওইসব জায়গা পুনর্দখল করতে জুন্টা সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারে সংঘর্ষ চলছে।মায়ানমারের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে আরাকান আর্মির তরফে জানানো হয়েছে, রাখাইনের মারাউক-ইউ, মিনবাইয়া, কিয়াকটাও এবং রাথেডং শহরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মায়ানমারের এক নাগরিক জানিয়েছেন, “রামব্রি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমার বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইন-সহ মায়ানমারের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। ওইসব জায়গা পুনর্দখল করতে জুন্টা সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যাতে ফের রোহিঙ্গার ঢল বাংলাদেশে না নামে, সেটা নিশ্চিত করতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এই বিষয়ে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক আধিকারিক জানান, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারে সংঘর্ষ চলছে। একজন রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটাতে পারে সেই ব্যাপারে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে দুপক্ষের সংঘর্ষে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। যাতে চাপ বেড়েছে দেশের সরকারের। হিংসা, মানবপাচার এবং মাদক কারবারের কারণে ভয়ানক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের একাধিক রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি। যা নিয়ন্ত্রণ করতে এখন হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.