সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশে বদলে গিয়েছে নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ঢাকায় নববর্ষে যে শোভাযাত্রা বের হয় এখন তা ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। যার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। তৈরি করা হয়েছিল দুটো বিশাল মোটিফ। যার মধ্যে একটি ছিল হাসিনার মুখাকৃতির। আজ শনিবার ভোরে আগুন লেগে যা পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে গিয়েছে। কীভাবে এই আগুন লেগেছে তা এখনও জানা যায়নি। অনেকেই মনে করছেন, এর পিছনে মৌলবাদীরা রয়েছে। আবার মহম্মদের ইউনুসের এক উপদেষ্টা দাবি করছেন, যেহেতু হাসিনার মুখাবয়ব ছিল মোটিফে তাই এই কাজ আওয়ামি লিগের। ফলে এই ঘটনায় ক্রমশ জলঘোলা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায় আনন্দ শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গিয়েছে। অনুষদের যেখানে মোটিফ তৈরির কাজ চলছিল সেখানেও সরঞ্জাম পুড়েছে। এর মধ্যে হাসিনার আদলে তৈরি মূল মোটিফটি পুরোপুরী নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়েছে। ভোর পৌনে ৫টা থেকে ৫টার মধ্যে দুটি মোটিফে আগুন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম জানান, “ভোরে আগুন লেগে দুটি মোটিফ পুড়ে গিয়েছে। জুলাই- আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবার নববর্ষের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছরের প্রধান মোটিফ ছিল ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। এটির উচ্চতা ২০ ফুট। এই মোটিফে বাঁশ ও বেত দিয়ে দাঁতাল মুখের এক নারীর মুখাবয়ব বানানো হয়। মাথায় খাঁড়া চারটি শিং, হাঁ করা মুখ, বিশালাকৃতির নাক ও ভয়ার্ত দুটি চোখ। যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবে ধারণা করা হয়েছে।”
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপন কখনই ভালো চোখে দেখেনি মৌলবাদী দলগুলো। দেড় দশক আগে ঢাকার রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখ উৎসবে বোমা হামলা হয়। তাতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। তাই হাসিনা সরকারের পতনের পর পয়লা বৈশাখ নিয়ে আরও বেশি সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে এবছর সুন্দরভাবে পয়লা বৈশাখ উৎসব উদযাপন নিয়ে নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগেই শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি জারি করে নির্দেশ দেয় যে, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা করতে হবে। কিন্তু এর মাঝেই ইসলামি আন্দোলনের পক্ষ থেকে পয়লা বৈশাখ নিয়ে রীতিমত ‘ফতোয়া’ জারি করে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নববর্ষের আয়োজন থেকে মঙ্গল শব্দ ও ধারণা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নববর্ষের আয়োজনে মূর্তি-সহ ইসলাম অসমর্থিত সবকিছু বাদ দিন। বরং এ দেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিবেচনা করে ইসলাম সমর্থিত ধারণা ও উপকরণ ব্যবহার করুন।
এরপরই মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের কথা জানা যায়। ফলে এই আগুন লাগার ঘটনায় অনেকেই মৌলবাদীদের দিকে আঙুল তুলছেন। পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রা ভণ্ডুল করতে এই পদক্ষেপ করা হয়ে থাকতে পারে। এদিকে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দাবি করেছেন, আওয়ামি লিগ সভাপতি ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় আগুন দিয়ে প্রতিকৃতি পুড়িয়েছে। তিনি জানান, যেই এই ঘটনার পিছনে আছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। যদিও এখনও পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তদন্ত চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.