সুকুমার সরকার, ঢাকা: দিন বদলেছে। তালাক মানেই পুরুষের স্বেচ্ছাচার আর অসহায় স্ত্রীর চোখের জল, এমন ধারণা যে অচল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্রমেই বাড়ছে তালাকের আবেদন। দিনে ২৪টি অর্থাৎ, ঘণ্টা পিছু একটি করে তালাকের আবেদন জমা পড়ছে। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ আবেদনই করছেন স্ত্রীরা।
[রোহিঙ্গা গণহত্যায় রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট, কাঠগড়ায় মায়ানমারের সেনাপ্রধান]
পরিবার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই একাধিক সোশাল মিডিয়ার ফাঁক গলে দাম্পত্যের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, ব্যক্তি স্বাধীনতাও ক্রমে স্বেচ্ছাচারে পরিণত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পেশাগত জীবনের চাপ ক্রমেই মানুষের ধৈর্যচু্যত ঘটাচ্ছে। দাম্পত্যের যে টুকটাক সমস্যা মুখোমুখি আলোচনায় সমাধান হতে পারত, সেগুলিই বর্তমানে আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কর্মব্যস্ত জীবনের নিঃসঙ্গতা কাটাতে দ্রুত একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করছে না এই প্রজন্ম। ফলে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। পাশাপাশি বিয়ের দায়িত্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঝক্কি এড়াতে লিভ ইন সম্পর্ককেই বেশি নম্বর দিচ্ছেন জেন ওয়াই। এই মানসিকতাই বিচ্ছেদ ভাবনার মূলে রয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের ইতিহাস একটু অন্য রকম। পুরুষ শাসিত সমাজে এতদিন তালাক দেওয়ার একচেটিয়া অধিকারী ছিলেন স্বামীরা। এবং তালাক পাওয়া স্ত্রী কার্যত অথৈ জলে পড়তেন। কারণ তালাকের পর তিনি বাপের বাড়ির আশ্রয়ও হারাতেন। এক দিকে অশিক্ষা, অন্যদিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ার কারণে মহিলারা তালাকের কথা ভাবতেও পারতেন না। শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহীত হলেও মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করতেন।
এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে মহিলাদের তরফে তালাকের আবেদন করার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ কে এম আশরাফুল হক। পাওয়ায় বনিবনাহীন তিক্ত সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী না করে বিচ্ছেদের কথা ভাবছেন তাঁরা। মহিলার পরিবারও তালাক হওয়া সন্তানকে আশ্রয় দিচ্ছেন। শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে তাঁরাই মেয়ের বিচ্ছেদের জন্য এগিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তালাকের আবেদনের হার সর্বাধিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দু’ক্ষেত্রেই পাঁচ শতাংশেরও কম আপস হচ্ছে। গত ছ’বছরে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫০ হাজারের বেশি তালাকের আবেদন জমা পড়েছে। স্ত্রীদের এই আবেদনের পিছনে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক, পরকীয়া, যৌতুকের দাবি, মাদকাসক্তি, ফেসবুক আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত-সহ একাধিক কারণ। স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামি শরিয়ত না মানা, সন্তান না হওয়ার মতো স্ত্রীর একাধিক ত্রুটি উল্লেখ করে তালাক চাইছেন স্বামীরা। গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বেশি হচ্ছে। অভিজাত শিক্ষিতা ও বিত্তবান মহিলাদের তালাকের হার বেশি। ১৯৬১ সালের মুসলিম পরিবার আইন অনুযায়ী, তালাকের আবেদনের ৯০দিনের মধ্যে কোনও পক্ষ আপস বা তালাক প্রত্যাহারের আবেদন না করলে তা কার্যকর হয়ে যায়।
[বছর ঘুরলেও অধরা দেশে ফেরার স্বপ্ন, শঙ্কিত রোহিঙ্গারা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.