সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজনের জন্য আরও ১৫ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার বা ১৩১১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা সহায়তার ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। সোমবার নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘ সদর দপ্তরে মায়ানমার বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে হ্যালি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মায়ানমার ও বাংলাদেশে বিতাড়িত মানুষ, শরণার্থী ও আশ্রয়দাতাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষদাতা হতে পেরে গর্বিত। গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে মায়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। চলমান জাতিগত নিধনে হত্যা, ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ। এরআগে এসেছে চার লক্ষ রোহিঙ্গা।
সহায়তা ঘোষণা করার পর নিকি হ্যালি বলেন, ‘সেখানে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন, তাই অন্য দেশগুলোরও নিজেদের দায়িত্ব পালন করা দরকার।’ তিনি বলেন, নতুন বরাদ্দের মধ্যে বাংলাদেশের থাকা রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজনের জন্য ১৫ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার রয়েছে। সুরক্ষা, জরুরি আশ্রয়, খাদ্য, জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সাপোর্ট-সহ মারাত্মক জরুরি সেবায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে। হ্যালি বলেন, নৃশংসতার জন্য জাতিগত নিধনে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া, সহিংসতা বন্ধ করা এবং সাহায্য সংস্থা ও সংবাদকর্মীদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। আর এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া ও সেবা করার জন্য বাংলাদেশের অবিচল বদান্যতাকে বিশেষভাবে সাধুবাদ জানাই। নতুন এই মার্কিন সহায়তার মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এই মানবিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ৩৮ কোটি ৯০ লক্ষ মার্কিন ডলার। মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর ‘বড় আকারের’ হামলার জন্য মায়ানমারের সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
সোমবার তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। রিপোর্টটি তৈরিতে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গার সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়। ২০ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতার আকার ছিল অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত, যা সেখানকার রোহিঙ্গা বাসিন্দাদের ভীত করে তোলে এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। সেনাবাহিনীর এ অভিযানের আওতা ও ব্যাপকতা ইঙ্গিত করে অভিযানটি ছিল সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত। রিপোর্টে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সেনাবাহিনীর দ্বারা শিশুহত্যা, নিরস্ত্র মানুষদের উপর গুলিবর্ষণ, ভুক্তভোগীদের জীবিত কবর দেওয়া বা গণকবরে ছুড়ে ফেলা, এমনকি জনসম্মুখে নারীদের শ্লীলতাহানির মতো নৃশংসতার ঘটনা উঠে আসে। এছাড়াও চারজন রোহিঙ্গা নারীকে অপহরণের পর বেঁধে তিন দিন ধরে ধর্ষণের পর অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে আসার ঘটনা পাওয়া যায় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেব মতে রাখাইনে মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বক্তব্যে মাতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত নেওয়া, তাদের বিপক্ষে বৈষম্যমূলক আইন, নীতি ও পদ্ধতি বাতিল করা এবং মিয়ানমারকে জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সুপারিশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মায়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.