সুকুমার সরকার, ঢাকা: আশায় বুক বেঁধেছেন বাংলাদেশের মানুষ। কেননা জোর কদমে কাজ চলছে ঢাকা মেট্রোরেলের। কাজ শেষ হলে দূর হবে অসহনীয় যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকার দিন শেষ হয়ে আসছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। ঢাকার উত্তরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কোথাও খুঁটি তোলার জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। কোথাও আবার এক্সকাভেটর দিয়ে তোলা হচ্ছে রাস্তার ওপরের পিচ। তৈরি করা হচ্ছে ভায়াডাক্ট।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আগারগাঁও এলাকায় আরও একটি ভায়াডাক্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে।
আগারগাঁও থেকে মীরপুর-১২ পর্যন্ত মেন রাস্তার মাঝখানের এলাকা বন্ধ করে দিন-রাত কাজ চলছে। দেশের প্রথম মেট্রো রেল প্রকল্প তৈরি হলে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান হবে বলেই মনে করছে সবাই। দিয়াবাড়ি, পল্লবী, তালতলা, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও এলাকায় জোরকদমে কাজ চলছে দেখে তাই হাসি ফুটেছে অনেকের মুখে। জাবালে নূর পরিবহনের যাত্রী মুরসালিন আহমেদ বাসের জানলা দিয়ে এই প্রকল্পের দৃশ্য দেখতে দেখতে
গন্তব্যে যাচ্ছেন। তার ফাঁকে বললেন, মাথার উপর দিয়ে ট্রেন চললে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর নিচে বসে থাকতে হবে না।
জানা গিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরের ডিসেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোর লাইন বসিয়ে তা চালু করা সম্ভব হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ হবে বসানো হবে থামের উপর। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করা হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলস্টেশন থাকবে ১৬টি। সারাদিন চলবে মোট ১৪ জোড়া ট্রেন। আর প্রতি ট্রেনে থাকবে ছটি করে বগি। একটি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। চার মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩৭ মিনিট। জাপান থেকে ট্রেনগুলির ইঞ্জিন, কোচ ও রেললাইন কেনা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে চার হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ট্রেনের রং হবে লাল-সবুজের। দোতলাসমান উচ্চতায় প্রতিটি রেলস্টেশন হবে ১৮০ মিটার দীর্ঘ। নিচতলায় থাকবে টিকিট কাউন্টারের পাশাপাশি থাকবে স্বয়ংক্রিয় প্রবেশপথ। স্টেশনের দু’পাশে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথও তৈরি করা থাকবে। জাপানি সংস্থা জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি হওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এপ্রসঙ্গে ওই সংস্থার আধিকারিক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকায় পরিষেবা চালু হবে। পরে আস্তে আস্তে পরিষেবার এলাকা বাড়ানো হবে। প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ এগিয়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ১৩.৪০ শতাংশ। ২০০৯ সালে প্রকল্পটির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। অনুমোদন পায় ২০১২ সালের জুনে। এরপর ২০১৬ সালের ২৬ জুন এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.