সুকুমার সরকার, ঢাকা: কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে তিন শিশু-সহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই আগুনে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গার বাসস্থান ও শতাধিক স্থানীয়দের ঘর পুড়ে গিয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উখিয়ার পুলিশ সুপার মহম্মদ আতিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে তিনশিশু-সহ ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক নিজামউদ্দিন আহমেদ জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১১ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বাসস্থান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। একইভাবে পুড়ে গিয়েছে শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়িও। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিও বিরামহীন কাজ করে যায়।
জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ই ও ডাব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নং রোহিঙ্গা শিবিরে। সর্বশেষ রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে গেছে প্রায় ১১ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি। এছাড়াও চাই হয়ে গিয়েছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক। ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য তৈরি একটি ডাটাবেসের হিসাব অনুসারে জানা গিয়েছে, বালুখালির ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-তে বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-তে বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুরউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ঘর হারিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বালুখালি কাসেম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের অনেকের স্বজন নিখোঁজ। উখিয়া দমকল বিভাগের আধিকারিক মহম্মদ এমদাদুল হক জানান, প্রাণান্ত চেষ্টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। অন্তত দেড়-দুই কিলোমিটার এলাকা আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে। এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আখ্যা দিয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দ্দৌজা নয়ন বলেন, “এটি অনেক বড় অগ্নিকাণ্ড। রোহিঙ্গাদের দাবি এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক শিশু ও বৃদ্ধের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.