সুকুমার সরকার, ঢাকা: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বন্ধুর সঙ্গে জায়গা বিনিময় করে ত্রিপুরার (Tripura) আগরতলায় গিয়ে থিতু হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা মাখনলাল সাহা। সেই মাখনলাল সাহার ছেলে ড. মানিক সাহা এখন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। ভারতে তো বটেই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সহ বাংলাদেশে এখন ড. মানিক সাহাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জানা গিয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁদের পৈতৃক ভিটা এখনও রয়েছে। এমনকী, বাড়ির বিদ্যুৎ মিটারে উপভোক্তার নামও পালটানো হয়নি। তাই মানিক সাহার বাবা মাখনলাল সাহার নামে এখনও ওই বাড়ির বিদ্যুৎ বিল আসে।
স্মৃতি হাতড়ে এই কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন মাখনলাল সাহার আদি বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা মহম্মদ শরিফুল ইসলাম মালদার। বললেন, “আমার বাবা নূর মিয়াঁ মালদারের বাড়ি ছিল আগরতলার ধলেশ্বরে। দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশে আসার সুবাদে বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় মাখনলাল সাহার। আলাপচারিতার মধ্যেই তাঁরা বাড়ি বিনিময় করেন। আমার খুব ভাল লাগছে যে, ভারতে আমাদের যে বাড়ি আছে, আর আমরা যে বাড়িতে থাকি, সেই বাড়ির একজন ত্রিপুরার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।” প্রশ্নের জবাবে আবেগে ভেসে তিনি আরও বলেন, “আমার বাবার কথা অনুযায়ী এখনও বিদ্যুতের মিটারের নামটি বদল করিনি। যখন মাখন কাকার নামে বিদ্যুতের বিল আসে তখনই কাকা ও আব্বার কথা খুব মনে পড়ে। আমি আমার সন্তানদেরকেও বলেছি যেন এ নামটা পরিবর্তন করা না হয়। “
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শরিফুল আরও বলেন, ‘আমার বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়তেন। থাকতেন কাজীপাড়া কিবরিয়া মহলে। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ত্রিপুরার অংশ। কাজী পাড়ায় থাকার সময়ে মাখনলাল সাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব। দেশভাগের সময় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। তখন দুই বন্ধু একে অপরের বাড়ি বিনিময়ের প্রস্তাব করেন। কম সময়ের মধ্যেই তা কার্যকর হয়। সেই থেকে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজীপাড়ার বাসিন্দা। আর আমাদের আগরতলার বাড়ির বাসিন্দা মাখনলাল সাহা।” শরিফুল আরও বলেন, “আমার ভাই, মানিক সাহা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আমরা বেশ খুশি। কয়েক মাস আগেও মাখন কাকার স্বজনরা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। বাবার সময় থেকেই আমাদের মধ্যে আত্মীয়ের সম্পর্ক। যা এখনও আছে।”
এদিকে, মানিক সাহা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসায় খুশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ। ‘নিজের এলাকার’ একজন পাশের দেশের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এটাই তাদের কাছে বড় পাওনা। এতে দু’দেশের মধ্যে আরও বেশি সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে এলাকার মানুষ আশা প্রকাশ করেন। ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপি সভাপতি ডা. মানিক লাল সাহা রবিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর আগের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব পদত্যাগের করেন। বিপ্লব কুমার দেবে’র পৈতৃক বাড়িও ছিল বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়ায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর এলাকার প্রধান সড়ক টিএ রোড হয়ে কাজীপাড়া ঢুকতেই মাখনলাল সাহার সেই বাড়ি। তিনি যে দালান ঘরটিতে থাকতেন সেটি বেশ পুরনো অবস্থায় আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। মাখনলাল সাহা ও তাঁর ভাইয়েরা যে জায়গাটি বিনিময় করে গিয়েছেন সেখানে একাধিক বাড়ির পাশাপাশি দোকানপাট রয়েছে। বাড়ির যে উঠোন ও বাগান ছিল সেখানেও ঘর তৈরি হয়েছে। টিংকু সাহা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি মাখন লাল সাহার সেই বাড়িটি চিনিয়ে দিলেন। বলেন, “মাখন সাহাকে আমি জ্যাঠা বলে ডাকতাম। ওনার ছেলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন খুব ভাল লাগছে। এটা আমাদের কাছে অনেক গর্বের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.