সুকুমার সরকার, ঢাকা: তিনি ধরে নিয়েছিলেন মারাই যাবেন। কিন্তু ঘাতকরা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায় সেজন্য মৃত্যুর আগে মাটিতে লিখে গেলেন খুনিদের নাম।মাটিতে লিখে যাওয়া ঘাতকদের নামের সূত্র ধরে ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অটোরিকশা চালক আশরাফুল ইসলামকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং পুলিশ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত চার জন। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও ছুরি। মূল হত্যাকারীরা রাতেই গ্রেপ্তার হয়। বুধবার দুপুরে ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের জেলা মুন্সীগঞ্জ (প্রাক্তন বিক্রমপুর) পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন।
তিনি জানান, ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন রুবেল। অটোরিকশার সামনে চালকের বাঁপাশে বসা হাসান আশরাফুলের একহাত চেপে ধরে। আর ডানপাশে বসা রাজেন অন্য হাত চেপে ধরে। পেছনে বসা আকরাম গামছা দিয়ে গলা চেপে ধরে। এরপর পেছনের সিটে বসা রুবেল গলায় ছুরি চালায়। পরে আশরাফুলকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ঝোপে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় এই চার জন।
চার হত্যাকারী হল- রুবেল (২৯), আকরাম মোল্লা (২১), হাসান (২২), রাজেন (২৪)। এছাড়া গ্রেফতার অন্য চার জন হলো : আমির ব্যাপারী (৪০), তোফায়েল (৪০), সবুজ শেখ (৩০), কাজল শেখ (৩১)। ঘাতক রাজেন ও রুবেল দুইভাই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আসাদুজ্জামান বলেন, অটোরিকশা চুরি করে দালাল আমির হোসেনের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ীর তোফাজ্জলের কাছে তা ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তোফাজ্জল লৌহজংয়ের মসদগায়ের সবুজের কাছে সেটি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে রাতেই সবুজ আবার কাজলের কাছে ৭০ হাজার টাকায় অটোরিকশাটি হস্তান্তর করে। পুলিশ লৌহজংয়ের কলমা গ্রামের কাজলের বাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করে।
লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, মৃত্যুর আগে মাটিতে আশরাফুলের লিখে যাওয়া নাম ধরেই হাসান ও রাজেনকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পরই বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনা। বুধবার সকালে কলমা থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশা ও গোয়ালীমান্দ্রা খাল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। আশরাফুলের মামা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। বুধবার বিকালে আশরাফুলের লাশ শ্রীনগরের বাঘড়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের বাঘড়ার থেকে রুবেল আর আকরাম লৌহজংয়ে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের অটোরিকশা ভাড়া করে। পরে শ্রীনগরের বেজগাঁও পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা থেকে অটোতে ওঠে হাসান ও রাজেন। পরে অটোটি লৌহজংয়ের কারপাশার নির্জন স্থানে এনে ঘাতকরা তাকে খুন করে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে গলা কাটা অবস্থায় স্থানীয়রা নিয়ে যায় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে আবার জ্ঞান ফেরে। এই সময় কাগজে কলম দিয়ে লেখেন শ্বশুর আবদুর রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর। এর পরই মোবাইলে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। এ সময় আশরাফুল আবারও কলম দিয়ে কাগজে ঘাতকদের নাম লিখেন। পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.