রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানী সাহা
সুকুমার সরকার, ঢাকা: মু্ক্তিযুদ্ধের সময় নৃংশসভাবে খুন করা হয়েছিল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা-সহ সাতজনকে। বৃহস্পতিবার, ৪৮ বছর পর সেই মামলার রায় ঘোষণা হল। মূল অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মাহবুব রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর পি সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানী সাহা হত্যাকাণ্ড-সহ তিনটি গণহত্যার অভিযোগ ছিল সাজাপ্রাপ্তের বিরুদ্ধে। সবগুলির শুনানির পর, এই নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মহম্মদ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটি।
গত ২৪ এপ্রিল শুনানি শেষ হলেও রায়দান স্থগিত রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করা হয়। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মাহবুব রহমানের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে। ২৮ মার্চ চার্জ গঠন হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে মামলার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এপ্রসঙ্গে সংস্থার চিফ কো-অর্ডিনেটর আবদুল হান্নান খান বলেন, ” মাহবুব রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে রাতে নারায়ণগঞ্জে রণদা প্রসাদ সাহার বাড়িতে হামলা চালায়। তার সঙ্গে স্থানীয় রাজাকারদের পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যও ছিল। এছাড়া একসময় উগ্র ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামাতেরও সমর্থক ছিল সে। তাদের হয়ে তিনবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেনি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল। শেষ করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে হামলা চালায়। তার বিরুদ্ধে অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও ৩৩টি খুনের প্রমাণ রয়েছে। এগুলির তদন্তের সময় ৬০ জনের সাক্ষী নেওয়া এবং মোট ১০০ পাতার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে।
মানবসেবায় অসামান্য অবদানের ছিল আর পি সাহার। তার স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। মানবহিতৈষী কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকারও রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। তাঁর বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসাতেও নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। তখন থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সেখান থেকেই তাঁদের তুলে নিয়ে যায় মাহবুব রহমান ও তার সহযোগীরা।
স্বাধীনতার আগে রণদা প্রসাদ সাহা কলকাতা ও ঢাকা দু’জায়গাতেই ব্যবসা করতেন। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দির সঙ্গে ছিল গভীর সখ্যতা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর শিক্ষা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য মির্জাপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভারতেশ্বরী হোমস‘। এখনও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও খেলাধুলোয় দারুণ সুনাম রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়ায় ৩০ লাখ মানুষের তালিকাতেও নাম রয়েছে রণদা প্রসাদ সাহার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.