সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকার বদলেছে সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছে মানসিকতাও। যে পাকিস্তানের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বলিদান দিয়েছিলেন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নর-নারী, হাসিনা বিদায়ের পর সেই পাকিস্তান প্রেমেই মশগুল বাংলাদেশের একটি অংশ। ইউনুস সরকারের ক্ষমতায় বসতেই জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের পর এবার দাবি উঠল মুজিবুর রহমানের পরিবর্তে বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্রপিতা’ ঘোষণা করা হোক পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলি জিন্নাকে। এমন দাবি প্রকাশ্যে আসতেই স্তম্ভিত বাংলাদেশের উদারপন্থী জনগণ।
গত বুধবার ছিল জিন্নার ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা প্রেস ক্লাবে। সেখানেই বিভিন্ন বক্তার তরফে যে দাবি করা হয় তার সার কথা হল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল তা আসল স্বাধীনতা নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ২ বার একবার ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট এবং ৫ আগস্ট। ১৯৭১ সালে যা হয়েছিল তা পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র। যা রচিত হয়েছিল দিল্লি থেকে। তাই শেখ মুজিবর রহমান নন, রাষ্ট্রপিতা হিসেবে ঘোষণা করা হোক জিন্নাকে। যুক্তি হিসেবে বক্তাদের দাবি, পাকিস্তানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ তৈরি হত না। জিন্না না থাকলে পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হয়ে থেকে যেত বাংলাদেশ। দিল্লির গোলামি করে দিন কাটত বাঙালিদের।
পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার পর এই দেশের মাটিতে এর আগে সেভাবে কখনও জিন্নার জন্ম বা মৃত্যুদিন পালিত হয়নি। যদিও পরে বিএনপি ও জামাতের আমলে ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজিত হলেও পরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে এমন সাড়ম্বরে জিন্নার মৃত্যুবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠান চিন্তা বাড়াচ্ছে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের। এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, “এক দিকে পাকিস্তানে অন্যদিকে বন্ধু দেশ বাংলাদেশ। মাঝখানে রয়েছে এক বিষধর সাপ। যারা এতদিন দুই দেশের সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলেছিল। আমরা আবার পরস্পরকে আলিঙ্গন করব।
প্রথমে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার পর এবার এমন দাবি প্রকাশ্যে আসার পর বিতর্ক চরম আকার নিয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় সেখানকার জনগণ প্রশ্ন তুলেছেন এটাও দেখার বাকি ছিল? কেউ প্রশ্ন তুলেছে, এবার কী তবে আমাদের পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে? সেখানকার বহু সাংবাদিক ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বকে নিশানা করে। এমন অনুষ্ঠান কেন প্রেস ক্লাবে করতে দেওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বহু সাংবাদিক। ক্ষোভ উগরে উদারপন্থীদের অভিযোগ, এই স্বাধীনতা আমরা চাইনি। এরা কোন পথে দেশকে নিয়ে যেতে চাইছে, তা আমাদের কাছে এখন স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, এটা সেই প্রেস ক্লাব যেখানে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সেনার অত্যাচারের খবর তুলে ধরার জন্য কামানের গোলায় উড়িয়ে দিয়েছিল পাক সেনা। যার প্রতিবাদ স্বরূপ সেনাশাসক হুসেইন মহম্মদ এরশাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সামিল হয় ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.