সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবছরের সার্বিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে কুমারি পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন। কিন্তু তার পরেও আলোচনা চলছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়, কুমারী পুজোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ এই কুমারি পুজো বাংলাদেশের হিন্দুদের অন্যতম আকর্ষণ। অবশেষে যাবতীয় জট কাটিয়ে মহাসমারোহে কুমারী পুজো হল রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে।
এদিন কুমারী পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে মন্দিরে। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ। এই পুজোয় শামিল হতে পেরে খুশি সকলে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে ঢাকার বাইরেও বিশেষ করে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট-সহ রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক শাখায় নিয়ম অনুযায়ী কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এবারেও অন্যথা হয়নি। আজ ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে আয়োজন করা হয় কুমারী পুজোর। সেখানেও ভিড় জমান অনেকে।
এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রামে কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয় ১০ বছরের প্রীত ধর ও ১১ বছর বয়সী শুভদ্রা বিশ্বাসকে। দুই জনের বয়স ১০ বছরের উর্ধ্বে হওয়ায় অপরাজিতা নামে পূজিত হন তারা। সকাল সাড়ে ৯টায় মাতৃরূপে ফুল, চন্দন, বেলপাতা, তুলশী পাতা দিয়ে শুরু হয় পুজো অর্চনা। পুজো পরিচালনা করেন শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরের পুরোহিত শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ। মন্দিরের পুরোহিত শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ সাংবাদিকদের বলেন, কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচিত করা হয়। মূলত নারীর যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্টিত করতে কুমারী পুজো করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পুজো করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান শেখ হাসিনা। পতন ঘটে আওয়ামি লিগ সরকারের। এখন ক্ষমতায় ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এই রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে নানা প্রান্তে নিপীড়নের শিকার হন হিন্দুরা। তাই মনে ভয়ে, আশঙ্কা, উদ্বেগ নিয়েই শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। দুর্গাপুজো নিয়ে নানা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল। এমনকী পুজো উপলক্ষে খুলনার দাকোপ উপজেলার ৫টি মন্দিরে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়ে উড়ো চিঠি পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ। কিন্তু নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপনের আশ্বাস দেয় ইউনুস সরকার। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। হাসিনাহীন বাংলাদেশে কীভাবে শান্তিপূর্ণ দুর্গাপুজো সম্পন্ন করে নয়া সরকার, সেদিকে নজর রাখছে ভারতও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.