সুকুমার সরকার, ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক টেলি কথোপকথনের সূত্র ধরে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। অভিযোগ এনেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর মহম্মদ আলি সুমন। তাঁর অভিযোগ, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কথিত এজেন্ট মেহমুদের সঙ্গে ওই কথোপকথনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘বানচালের ষড়যন্ত্র’করেছেন খন্দকার মোশাররফ। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে মহম্মদ আলির আবেদনে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কিংবা মেহমুদ নামে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কখনও কোনও কথা হয়নি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য নিয়েই বানানো অডিও প্রচারও প্রকাশ করা হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার গণমাধমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেছেন মোশাররফ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন খন্দকার মোশাররফ। নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না বলে জানান তিনি। মোশাররফ বলেন, ‘এ ভিডিওটি আমার ভাবমর্যাদা নষ্ট, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারকাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং আমাকে বিব্রত করতেই প্রচার করা হচ্ছে। মেহমুদ নামে কোনও ব্যক্তিকে আমি চিনি না।’ দাউদকান্দি থানার ওসি মহম্মদ আলমগির হোসেন জানান, মহম্মদ আলির অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে, এ কারণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী মহম্মদ আলি কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামি লিগের প্রার্থী সুবিদ আলি ভুঁইয়ার ছেলে।
[সন্ত্রাসবিরোধী চলচ্চিত্রের নায়ক-পরিচালককে হত্যার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২]
বিএনপি-জামাতের নেতারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’করছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ নেতারা। খন্দকার মোশাররফের কথিত ওই অডিও টেপকে তারা সেই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। ওই অডিও টেপের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ইতিমধ্যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। সময় টেলিভিশন ওই টেলি কথোপকথনের সাত মিনিটের একটি অডিও তাদের ইউটিউব চ্যানেলে দিয়েছে। ওই অডিওতে এক পাশের কণ্ঠ খন্দকার মোশাররফের এবং অন্যপ্রান্তের কণ্ঠ কথিত সেই আইএসআই চরের বলে দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সেই আইএসআই এজেন্ট আছেন দুবাইয়ে। তাদের দেখা হয়েছিল ইসলামাবাদের একটি হোটেলে। তারা আবারও বৈঠক করতে চাইছেন, কিন্তু মামলা জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। যাকে মোশাররফ বলা হচ্ছে, তাকে ওই অডিওতে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায়, “আপনি জানেন.. আমরা সত্যিই সংকটে আছি। আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আমার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আমি দেশের বাইরে যেতে পারি না। এই আমার পরিস্থিতি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি এখনও তাই আছি যা আপনারা ভাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, আমার পক্ষে বাইরে এসে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব না। আমি জানি, তা করা গেলে ভাল হত। কিন্তু আমি এখানে আপনার লোকের সাথে দেখা করতে পারি, আপনারা বার্তাটা পেতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাদের অনুরোধ করতে চাই, আপনারা যদি আপনাদের দিক থেকে চিনের সঙ্গে কো-অপারেট করতে পারেন, বাংলাদেশে সেটা নির্বাচনের আগে ফলপ্রসূ হত।” থানায় মহম্মদ আলির করা অভিযোগে বলা হয়েছে, “খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে দুবাই অবস্থানরত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্ট মেহমুদের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন যা ১১ তারিখ এশিয়ান ট্রিবিউন এ প্রকাশিত হয়।
[নির্বাচনী প্রচার শুরু হতেই আওয়ামি লিগ-বিএনপি সংঘর্ষ, নিহত ১]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.