ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজও জামিন পেলেন না ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু। চট্টগ্রাম আদালতে খারিজ হয়ে যায় তাঁর জামিনের আবেদন।
বাংলাদেশে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্দি সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা যাবজ্জীবন জেল। তবে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে মৌলবাদীদের হাতে নিপীড়িত হিন্দুদের হয়ে আওয়াজ তোলার জন্যই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে, একথা স্পষ্ট।
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করে দেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে হওয়া শুনানিতে বন্দি সন্ন্যাসীর পক্ষে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর একটি দল। তবে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে চিন্ময়কে আদালতে হাজির করা হয়নি। আদালতে আইনজীবীর উপস্থিতিতে ভারচুয়াল হাজিরায় জামিন শুনানি হয়। এদিন সকাল থেকেই আদালত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি সহ-কৌশুলী মহম্মদ রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, এর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছে। কেউ ক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এই মুহূর্তে চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। তাই অন্য আইনজীবীরা এগিয়ে আসেন সওয়াল করার জন্য। তবে আদালত তাঁদের যুক্তি মেনে নেয়নি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সবুজ সংকেত দিয়ে চিন্ময় প্রভুর জামিন খারিজ করে দেন বিচারক। ফলে তাঁকে জেলেই থাকতে হবে। এই প্রসঙ্গে কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস বলেন, “আমরা আশায় ছিলাম। এদিনে রায় খুবই হতাশাজনক।”
গত ২৫ নভেম্বর বিকালে ইসকনের সন্ন্যাসীকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২৬ তারিখ চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হয় তাঁকে। আনা হয় রাষ্ট্রদোহ মামলা। শুনানি শেষে জামিন খারিজ হয়ে যায় চিন্ময় প্রভুর। এরপর হামলার মুখে পড়ে আইসিইউ-তে ভর্তি হতে হয় তাঁর আর এক আইনজীবীকে। এই গ্রেপ্তারি নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন হিন্দুরা। কড়া বার্তা দেয় ভারতও। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। প্রায় দেড় মাস হয়ে গেলেও গারদের পিছনেই রয়েছেন চিন্ময় প্রভু। গত ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তাঁর শুনানি ছিল। কিন্তু ‘প্রাণভয়ে’ ৫১ জন আইনজীবী দলের কেউই চিন্ময়ের হয়ে আদালতে সওয়াল করতে আসেননি। ফলে পিছিয়ে যায় জামিন মামলার শুনানি। পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয় ২ জানুয়ারি।
এর মাঝেই হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেলবন্দি করে রাখতে নানা ফন্দি আঁটে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার! কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট সংবাদমাধ্যমে দাবি করে, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি আটকাতে ৭০ জন হিন্দু সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাতে কেউ তাঁর হয়ে আদালতে দাঁড়াতে না পারেন।
উল্লেখ্য, চিন্ময়কাণ্ডে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যে আরও খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট। পড়শি দেশে ভারত-বিদ্বেষ চরমে পৌঁছলেও আপাতত আস্থার বার্তা দিয়েছে দিল্লি। বদলা নয়, বরং কূটনৈতিক বোঝাপড়ায় আগ্রহী সাউথ ব্লক। তবে এদিন চিন্ময়ের জামিন খারিজ হওয়ায় ঘরে চাপ আরও বাড়বে মোদি সরকারের উপর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্রবাদী সরকার কেন ওপার বাংলায় হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না, সে প্রশ্ন ক্রমে জোরাল হচ্ছে। ৯ ডিসেম্বর বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরির ঢাকা সফর কি তাহলে নিষ্ফলা? বিরোধীরাও কেন্দ্রের এহেন ‘নরমপন্থা’য় সরব। ফলে মৌনব্রত অবলম্বন করে দীর্ঘদিন উত্তর এড়িয়ে যেতে পারবেন না মোদি-শাহরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.