সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে নাকি কমছে করোনা ভাইরাসের দাপট! আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে এল সেই তথ্য। যদিও বাস্তবের সঙ্গে এর আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে বলেই দাবি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
লকডাউন তুলে দেশকে ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশে বাগে আনা যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণের মাত্রা। ফলে করোনা মোকাবিলায় নেমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পুরানো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় গত শনিবার ভোর থেকে ‘রেডজোন’ (Red Zone) ঘোষণা করে ফের লকডাউন করা হয়। এর আগে ঢাকার রাজারবাগ রেডজোন হিসেবে পরিচিত ছিল। গত কয়েকদিনে ওয়ারী এলাকাতেও বাড়ছে করোনার প্রকোপ। যে পরিমাণে গণ-নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তার অর্ধেক জনের শরীরেই মিলছে মারণ ভাইরাসের উপস্থিতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও সম্প্রতি সেই তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন। জানা যায়, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ারীর আওতাভুক্ত এলাকা টিপু সুলতান রোড, লারমিনি স্ট্রিট, জাহাঙ্গীর রোড, ওয়্যার স্ট্রিট, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, হেয়ার স্ট্রিট, জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন, র্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট এলাকায় ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। এই এলাকাগুলিতে ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান-পাট, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা রয়েছে। গোটা দেশে যেখানে ২৩ শতাংশের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে লকডাউনে ওয়ারীতে প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সংক্রমণ। তারই মাঝে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক রিপোর্ট ঘিরেই শুরু হয়েছে ধন্দ। কারণ, বাস্তবের করোনা চিত্রের সঙ্গে বিস্তর অমিল এই রিপোর্টের। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকের পরই এই রিপোর্টের কথা জানান মেয়র তাপস। তাঁর কথায়, “এই সংক্রমণ থেকে বেরিয়ে আসতে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সবাইকে তা মেনে চলতে হবে। এই এলাকায় ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে।”
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (Johns Hopkins University) পাঁচ দিনের করোনার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশের করোনার প্রকোপ কমে আসছে। সংস্থাটির ট্র্যাকার বলছে, বাংলাদেশে ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসতে শুরু করেছে। সংক্রমণের ১৮তম সপ্তাহে এসে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দুটিই নিম্নমুখী হয়েছে। এছাড়া সংক্রমণের শীর্ষে থাকা বিশ্বের ২০টি দেশের প্রবণতা তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি রাশিয়া, চিলি, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান ও মিশরে করোনার প্রকোপ নিম্নমুখী। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, ইরান, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরাক, পাকিস্তান, বলিভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ইকুয়েডর এবং আর্জেন্টিনায় সংক্রমণের প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। জনস হপকিন্সের তথ্যচিত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ ১২০ দিন আগে মার্চের ৮ তারিখে ধরা পড়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন করোনায় আক্রান্ত। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৫১ জন। করোনার হিসাব রাখা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডও মিটারসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৮ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৭ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.