সুকুমার সরকার, ঢাকা: শ্রীলঙ্কায় হামবানটোটা বন্দর চিনের দখলে। নেপালে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসেছেন বেজিং ঘনিষ্ট পুষ্পকমল দহল। আফ্রিকায় জিবৌতিতে নৌসেনা ঘাঁটি তৈরি করেছে লালফৌজ। এবার বাংলাদেশেও শিকড় মজবুত করতে চাইছে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিমানবন্দর তৈরিতে আগ্রহী ভারত। বিশ্লেষকদের মতে, চিনকে ঠেকাতেই কৌশলি পদক্ষেপ করছে দিল্লি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মহম্মদ মফিদুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে নয়াদিল্লির এই আগ্রহের কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতে নিয়োজিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যমান বিমান বন্দরগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভারতীয় অর্থায়নের (লাইন অব ক্রেডিট) মাধ্যমে নতুন বিমানবন্দর তৈরি ও পরিচালন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকালে দু’দেশেরে অ্যাভিয়েশন সেক্টরের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশের (Bangladesh) অ্যাভিয়েশন সেক্টরে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ১২ জন আধিকারিক ভারতের এলাহাবাদে বেসিক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস প্রশিক্ষণ করছেন। ওই প্রশিক্ষণের যাবতীয় ব্যয়ভার ভারত সরকার বহন করছে। এ সহযোগিতার জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান চলাচল চুক্তি ১৯৭৮ সালে সম্পাদিত হয়। আলোচনাকালে দু’দেশের বিদ্যমান বিমান চলাচল চুক্তি আধুনিকায়ন করার ওপর জোর দেওয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ তরান্বিত করার লক্ষ্যে আরও বেশি পরিমাণে নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালুর জন্য দুই দেশের বিমান সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করতে আলোচনা হয়। বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রধান শহরগুলোর সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেন ভারতের রাষ্ট্রদূত।দু’দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি মউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের আকাশসীমায় এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহ সমাধানের ওপর ফলপ্রসূ আলোচনা করা হয়।
প্রসঙ্গত, চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণের সম্পর্ক জোরদার হয় বিগত দশকে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরকালে বাংলাদেশকে ২৭টি প্রকল্পে ২ হাজার কোটি ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ-সহ যোগাযোগ পরিকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্প রয়েছে। ঋণচুক্তি হয়েছে ন’টি প্রকল্পে। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবছর গড়ে একটি প্রকল্পের অর্থায়নে চিনের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে- ঢাকা হয়তো চিনের ঋণে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করছে। এটা সঠিক নীতি। কারণ, উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়া হয় না বলে চিনের মতো দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ঋণ নিলে উচ্চমূল্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। আবার কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.