সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন চায় ভারত। বাংলাদেশ সফরকালে এমনটাই বার্তা দিলেন ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সম্যক সমস্ত বিষয়েই যে বন্ধু ঢাকার পাশেই রয়েছে নয়াদিল্লি তা স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ দূত।
এদিন, রাজধানী ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রিংলা। ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে শুরু করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা-সহ একাধিক বিষয়ে কথা হয় দুই আমলার মধ্যে। বৈঠক শেষে শ্রিংলা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাতের সময় দেওয়া তিনি অত্যন্ত খুশি। ভবিষ্যতে দু’দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক আরও মজবুত করে তুলবে। শরণার্থী সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের বিদেশ সচিব বলেন, “ভারত চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং পাকাপাকিভাবে তাঁদের দেশে ফিরে যাক।”
বিশ্লেষকদের মতে, সম্পরটি তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চিন (China)। সেই ঘটনায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে ভারত। ঢাকা যাতে বেজিংয়ের বলয়ে প্রবেশ না করে সেই বিষয় সুনিশ্চিত করতে তড়িঘড়ি গত মঙ্গলবার পোড় খাওয়া কুটনীতিবিদ হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে বাংলাদেশ পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই চেষ্টা যে খানিকটা সফল হয়েছে, মঙ্গলবার হাসিনা-শ্রিংলা বৈঠকে তা সাফ হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে জনসমক্ষে ভারতের বিদেশ সচিব জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রিংলাকে পাঠানোর জন্য মোদির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। এছাড়া মহামারীর মধ্যেও উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০টি রেল ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুশি হয়েছেন বলে শ্রিংলাকে জানিয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব হিসেবে ‘বাবল ট্রাভেল’ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এর আওতায় যেসব ফ্লাইট চলবে সেগুলোতে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীরাই যাতায়াত করতে পারবেন। অন্য কোনো দেশের যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের (Bangladesh) রোগীরা যাতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এ প্রস্তাবে রাজি হলে রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সীমিত পর্যায়ে ভিসা চালু করবে ভারত।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত সতর্কভাবে মন্তব্য করেছেন ‘কৌশলি’ শ্রিংলা। শরণার্থী বিষয়টি যে বাংলাদেশ ও মায়ানমার দু’দেশের কাছেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এবং দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের বন্ধুত্বপুরনো সম্পর্ক। নৌবাহিনীর জন্য ভারতের কাছ থেকেই প্রথম সাবমেরিনটি কিনেছে মায়ানমার। একইভাবে, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে ভারতের। সেই কথা মাথায় রেখে কাউকেই এই মুহূর্তে চটাতে চাইছে না নয়াদিল্লি। ফলে নাইপিদাওয়ের কোনও সমালোচনা না করে যথারীতি শরণার্থীদের দেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন শ্রিংলা। তাঁর এই চেষ্টা ভবিষ্যতে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা সময়ই বলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.