সুকুমার সরকার, ঢাকা: পাত্র বিজয় আর পাত্রীর নাম বনলতা। দু’জনের বিবাহবাসরে আমন্ত্রিত দেড় হাজার লোক! বাংলাদেশের (Bangladesh) উত্তরে রাজশাহী জেলার প্রাচীন মন্দিরে বিয়ের পর খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন। যা ঘিরে আপাতত আলোচনা সবমহলে। কারণ, পাত্র বটগাছ এবং পাত্রী একটি পাকুড়গাছ। বেশ ঘটা করেই সেই বিয়ে হল এবং সেই গাছ ‘দম্পতি’র বউভাতে নিমন্ত্রণ খেলেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
শনিবার রাজশাহীর (Rajshahi) খড়খড়ি বাইপাসে শ্রী শ্রী গোপালদেব ঠাকুরের মন্দির নারায়ণ পুজোর মধ্যে দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ১৭ বছর আগে পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল গাছ এই দুটি। বট গাছকে ‘বর’ ও পাকুড় গাছকে ‘কনে’ ধরে এদিন বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বটের নতুন নাম রাখা হয় ‘বিজয়’। আর পাকুড়ের নাম হয় ‘বনলতা’। এই বিয়েতে বটের বাবা-মা হয়েছিলেন বিধানচন্দ্র সরকার ও আরতি রানি সরকার দম্পতি। পাকুড়ের বাবা হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার ও মা হয়েছিলেন কনিকা রানি সরকার।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, পাশাপাশি বট ও পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই শনিবার ধুমধাম করে দুটি গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলাও সাজানো হয়। সামিয়ানার পাশাপাশি সেখানে লাগনো হয় অত্যাধুনিক আলো। হিন্দু রীতি মেনে কলাগাছ দিয়ে সাজানো ছিল বিয়ের আসর। দিনভর চলে গানবাজনা। গানের তালে তালে বর ও কনেপক্ষের নাচানাচি। পাশেই ব্যস্ত রাঁধুনিরা। একেবারে মানুষের বিয়ের মতোই আয়োজন। তফাৎ শুধু একটাই, বর-কনে স্থবির, একই জায়গায় তারা দাঁড়িয়েছেন।
এদিন বিকেল থেকে সন্ধে বরযাত্রীদের ভিড় ছিল। বাতাসা খাইয়ে তাঁদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। জমে ওঠে বিয়ের অনুষ্ঠান। পাকুড় গাছের ‘মা’ কনিকা রানি বলছেন, ১০ দিন আগে তিনি পাকুড়ের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত জানতে পারেন মন্দির কমিটির মাধ্যমে। মূলত মেয়ের বিয়ে দেওয়া উপলক্ষেই তিনি মা হয়েছেন। গাছের মা হওয়া এবং ধুমধাম আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে দেওয়ায় তিনি বেশ আনন্দিত। পুরোহিত পুলক আচার্য বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতার দায়িত্বে ছিলেন। গোধূলি লগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেছেন তিনি।
বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন প্রায় হাজার দেড়েক অতিথি। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় পোলাও, সবজির ঘণ্ট আর পায়েস। সঙ্গে ছিল জলপাইয়ের আচার। বিয়ের এই আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের বিষয়ে মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার বলেন, ”হিন্দু শাস্ত্রে আছে, বট-পাকুড় পাশাপাশি থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। রীতি মেনেই এই আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.