সুকুমার সরকার, ঢাকা: অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য কিছু শর্ত দিয়ে ভারত বিদেশে গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ-সহ একাধিক দেশ। কেননা বাংলাদেশে (Bangladesh) পর্যাপ্ত ধান উৎপাদন হলেও গম উৎপাদনে পিছিয়ে সেদেশ রয়েছে। এজন্য ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
অবশ্য বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে গম রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
“ভারত বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধ করলেও সরকারিভাবে গম (Wheat) রপ্তানি বন্ধ করেনি। বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধের এই সিদ্ধান্তও হয়তো এক মাস বা ১৫ দিন পর তুলে নেওয়া হবে। তাই আমাদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়”, বলেন সাধনচন্দ্র মজুমদার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) শুরুর পর বাংলাদেশের ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বেড়ে যায়। ঠিক এমন সময়ে ভারতের এই ঘোষণার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার শর্তে প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য গম আনার সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বাংলাদেশকে সেই শর্ত কাজে লাগিয়ে গম আমদানিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প বাজারও খুঁজতে হবে। রবিবার দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাধন জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর গম আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। ভারত গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে নেবে বলে আশা বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী।
সাধনচন্দ্র মজুমদারের কথায়, “বিগত এক বছর আমরা বিদেশ থেকে চাল আমদানি করিনি। আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত ধান দিয়েই চালের চাহিদা মিটছে। তবে গম আমাদের দেশে হয় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গম আমদানি করা হত ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু এই দু’দেশের যুদ্ধের সময়ে আমরা ভারত থেকে তিন লক্ষ মেট্রিক টন গম আমদানি করেছি। পরবর্তীতে যা দরকার তাও ভারত থেকে আমদানি করা হবে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জন্য ভারত দু’টি কারণের কথা বলেছে। একটি হচ্ছে নিজেদের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা সমন্বয়। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী এবং খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই বড় প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ এই সুবিধা প্রাপ্য। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমার বিশ্বাস, ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যেভাবে আমাদের পাশে আছে। আগামী দিনেও থাকবে নিশ্চিত। চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা অবশ্যই ভারত থেকে আগের মতো গম, চাল অন্য ভোগ্য পণ্য আমদানি করতে পারব। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই নিশ্চয়তা আদায় করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। ” নিষেধাজ্ঞার শর্তে ভারত অবশ্য জানিয়েছে , নিষেধাজ্ঞার আগে অর্থাৎ ১৩ মের আগে ভারত থেকে গম আমদানিতে যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে সেগুলো রপ্তানিতে কোনও বাধা নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.