সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘দুর্বল চিত্তের মানুষদের আমার সঙ্গে থাকার দরকার নেই।’ সচিবালয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলে একথাই বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানেই ‘সড়ক পরিবহণ আইনে’-র রদবদল নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনা প্রসঙ্গে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানানো হয়, কেউ যদি বেপরোয়া গতির বলি হন, তাহলে অভিযুক্ত গাড়ি চালকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে তা তদন্ত সাপেক্ষ।
ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তোলপাড় বাংলাদেশ। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সচিবালয়ে উপস্থিত মন্ত্রীদের অনেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে সমালোচনা। সব কথাই প্রধানমন্ত্রীর কানে এসেছে। এ নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই তিনি বলেন, এটা এমন কোনও আন্দোলন ছিল না যে এত বিচলিত হতে হবে। আন্দোলন করতে গেলে রোদে পুড়তে হয়। বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই হয় আন্দোলন। এই ঘটনায় যারা বিচলিত হয়েছেন তাঁরা দুর্বল চিত্তের মানুষ। এত দুর্বল চিত্তের হলে চলে না। দুর্বল চিত্তের এই মানুষদের আমার সঙ্গে থাকার দরকার নেই, তাঁরা না থাকাই ভাল। তাছাড়া এই আন্দোলনে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে নানা ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। যাচাই না করেই কেউ কেউ এ ধরনের বিভ্রান্তিতে কান দিয়েছেন। আসলে সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করেই সমস্ত গুজব ছড়িয়েছে। যার জেরে সমস্যা বেড়েছে।
বলা বাহুল্য, সড়ক পরিবহণ আইনের নয়া রদবদল বেশ চমকে দিয়েছে। এবার বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় কারও মৃত্যু হলেই গাড়ি চালককে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাবে বাংলাদেশের আদালত। কোনও চালকের বিরুদ্ধে যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে গাড়ি চাপা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুসারে ধৃতর জন্য ৩০২ ধারার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। যার অর্থ মৃত্যুদণ্ড। কেউ সংশ্লিষ্ট আইনটি লঙ্ঘন করলে পাঁচ বছরের কারাবাসের শাস্তি পাবে। এই সময় অনেকেই সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে সাত বছরের কারাবাস নির্ধারণের আরজি জানান। তবে পাঁচ বছর শাস্তিতেই সিলমোহর দেন শেখ হাসিনা।
পথ দুর্ঘটনায় ছাত্রমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশ। নিরাপদ রাস্তার দাবিতে পড়ুয়ারা দলবেঁধে পথে নেমেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সড়ক পরিবহণ আইনেও রদবদল এনেছে হাসিনা সরকার। এদিন সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আগের আইনে নেগলিজেন্সি অব ড্রাইভিং-এর সাজার মেয়াদ ছিল তিন বছর। নতুন আইনে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর ও জামিন অয়োগ্য করা হয়েছে।আইনের ১৭৭ ধারা বদলে ১২৪ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সড়ক পরিবহণ আইন ১৪ ধারায় ভাগ হয়েছে।এবার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য নয়া রেগুলেটরি আসছে। দুর্ঘটনার পর তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ইচ্ছাকৃতভাবেই দুর্ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বিচার হবে। মামলার গুরুত্ব বুঝে তা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে। সম্প্রতি পথদুর্ঘটনায় মৃত দুই পড়ুয়ার পরিবারের তরফে দায়ের হওয়া মামলায় ৩০২ ধারা কার্যকরী হবে। সংসদের আগামী অধিবেশনেই পাশ হয়ে যাবে এই ‘সড়ক পরিবহণ আইন’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.