সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে বিমান অপহরণের চেষ্টা ঘিরে টানটান উত্তেজনা। রবিবার বিকেলে ঢাকার শাহ জালাল বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমান – ময়ূরপঙ্খী। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমানটি নামতেই ককপিটে ঢুকে পড়ে এক বন্দুকধারী আততায়ী। ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। বিমানের ভেতরেও ঢুকে পড়ে ওই বন্দুকবাজ। তুমুল উত্তজেনা তৈরি হয় যাত্রী এবং বিমান কর্মীদের মধ্যে। সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিমানে ছিলেন ১৪২ জন যাত্রী এবং ৫ জন কেবিন ক্রু। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের ওখানেই নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার টানটান উত্তেজনার পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার অবসান হয়। রবিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে কমান্ডোদের হাতে নিহত হয় ছিনতাইকারী। তবে বিমানের যাত্রী, ক্রু-সহ সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিমানটিতে থাকা একাধিক ক্রু ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আকাশে ওড়ার পরপরই বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। পুরো কাজটি করেন ওই বন্দুকবাজ। ওই ব্যক্তি পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিজের নাম ‘মাহাদি’ বলে উল্লেখ করে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিজি – ১৪৭ ময়ূরপঙ্খী নামে বিমানটি উড়ছিল দুবাইয়ের উদ্দেশে। চট্টগ্রামের কাছেই বিপদ ঘনিয়ে আসে। বিমানটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে নামার সময়েই ককপিটে ঢুকে পড়ে বন্দুকবাজ। জরুরি অবতরণ করানো হয়। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ, ব়্যাব-সহ দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা আধিকারিকরা। দ্রুত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটি ঘিরে ফেলা হয়। বন্দুকবাজকে কড়া নজরে রাখেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পৌঁছে যায় বিমানবন্দরের বিশেষ বাহিনীও। চট্টগ্রাম বন্দর কাছে থাকায়, সেখান থেকে নৌকমান্ডোকেও নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরে। শুরু হয় গুলিযুদ্ধ। বিমানের ভিতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। সূত্রের খবর, বিমানচালক এবং ৫ কর্মীকে পণবন্দি করে রাখা হয়েছে। গুলিযুদ্ধের সময় তাঁদের একজনও আহত হয়েছেন বলে খবর। তবে খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
বিমানে থাকা এক যাত্রী জানাচ্ছেন, আচমকা এমন ঘটনায় তাঁরা প্রথমদিকে ভেবেছিলেন, বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় তা জরুরি অবতরণ করেছে। কিন্তু শাহ আমানত বিমানবন্দরে নামতেই পুরো ব্যাপরটা স্পষ্ট হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে। আততায়ী বিমানের ভিতরে উঠে যায়। তিনি জানাচ্ছেন, বন্দুকবাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান। এরপরই নিরাপত্তার স্বার্থে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় বিমানের নিরাপত্তা বাহিনী। বন্দুকবাজের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়েছে। এই ঘটনার জেরে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে আপাতত বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারা, কী উদ্দেশে এই বিমান অপহরণের ছক কষেছে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.